আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিকিৎসা বিহীন অবস্থায় পড়ে রইলেন তরুণ। চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যু তো হলই, কিন্তু মৃত্যুর পরেও কেউ এল না তাঁর মৃতদেহের কাছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত্যুর পর প্রায় ১১ ঘণ্টা তার দেহ হাসপাতালের বেডেই পড়ে ছিল। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে, কানপুর দেহাত মেডিকেল কলেজে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে ২৫ বছর বয়সী এক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। মৃত্যুর পর প্রায় ১১ ঘণ্টা তাঁর দেহ হাসপাতালের শয্যাতেই পড়ে ছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর প্রায় ১.১৫ নাগাদ অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন ব্যক্তি সুন্দর নামের ওই যুবককে মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।

জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কোনওভাবেই কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। ভর্তি করার পর চিকিৎসকেরা দেখতে পান তিনি বারবার বমি করছেন। ওই যুবকের অবস্থা ক্রমশ গুরুতর হতে থাকে। দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কানপুরের হ্যালেট হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু রোগীর সঙ্গে কোনও আত্মীয় উপস্থিত না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় থানায় খবর দেন। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রোগীকে যেন নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার জন্য একজন নিরাপত্তারক্ষীও চাওয়া হয়। এইখানেই দেখা দেয় মূল সমস্যা।

অভিযোগ, দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোনো নিরাপত্তারক্ষী আসেনি হাসপাতালে। এই অবস্থায় রোগী ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকেন। রাত প্রায় ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। চোখের সামনে তরুণের এই অবস্থা দেখে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মৃত্যুর পরও হাসপাতাল কর্মীরা দেহ সরানোর উদ্যোগ নেননি। রাতভর দেহটি ওয়ার্ডেই পড়ে থাকায় পচনের দুর্গন্ধে অন্যান্য রোগীরা রুম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। রবিবার সকালে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়রা হৈচৈ তুললে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। খবর পেয়ে কানপুর দেহাতের জেলাশাসক হাসপাতালে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি দেহ দ্রুত সরানোর নির্দেশ দেন।

অবশেষে সকাল ৯টার দিকে এক আউটসোর্সের সাফাই কর্মী মৃতদেহটি মর্গে নিয়ে যান। পুলিশ দাবি করেছে, তারা নিরাপত্তারক্ষী পাঠিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে কোনও অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। অন্যদিকে, চিকিৎসকরা বলছেন, নিরাপত্তা না দেওয়ায় রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাজ্জনলাল ভার্মা অভ্যন্তরীণ তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে চিফ মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট একে সিং ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের জরুরি পরিষেবায় এমন অবহেলা এবং পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠছে।