আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের একবার বেআব্রু দেশের বিমান পরিষেবার চরম গাফিলতি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে। বাতিল শ'য়ে শ'য়ে বিমান। বিমানবন্দরের মধ্যেই পিরিয়ড শুরু মেয়ের। শুধুমাত্র একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য কাতর আর্জি অসহায় বাবার‌। ইন্ডিগোর অচল অবস্থায় বিমানবন্দরে চোখে জল আনা দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকার পর ইন্ডিগো সংস্থার বিরুদ্ধে তুমুল ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন যাত্রীরা। সেই আবহেই এক ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য আর্জি জানান। কিন্তু তখনও ইন্ডিগো সংস্থার কর্মীরা কোনও সহযোগিতা করেননি। 

 

এক ভিডিওতে দেখা গেছে, এই ব্যক্তি চিৎকার করে বলেন, 'আমার মেয়ের পিরিয়ড হয়ে গেছে। রক্ত ঝরছে। আমি ওর বাবা হয়ে কাঁদছি। বিমান পরিষেবা তো নেইই। প্লিজ একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন দিন।' যদিও এর উত্তরে ইন্ডিগো কর্মীরা জানান, 'এ বিষয়ে তাঁরা সাহায্য করতে পারবেন না। তাঁদের কাছেও স্যানিটারি ন্যাপকিন নেই।' 

 

ইন্ডিগো কর্মীদের এহেন আচরণে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন ওই ব্যক্তি। চিৎকার করতে শুরু করেন। তাঁকেও সমর্থন করেন বাকি যাত্রীরা। যে ভিডিওটি ঘিরে নিন্দার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়াতেও। কেন্দ্রের সরকারের 'আচ্ছে দিন' নিয়েও তুমুল কটাক্ষ করছেন সকলে। 

 

চালক সঙ্কটে ইন্ডিগোর বিমান বাতিলে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। চরম হয়রানির শিকার যাত্রীরা। ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে অসন্তুষ্ট কেন্দ্র। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সকে অপসারণের দাবি জানাতে পারে। বিমান পরিবহন মন্ত্রক শনিবার সন্ধ্যায় ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষকে তলব করেছে। পাশাপাশি ওই বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত মিলেছে। সূত্রগুলি জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মালিকানাধীন ইন্ডিগো-র উপর আর্থিক জরিমানা চাপানো হচ্ছে। 

 

শুক্রবার এক হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে আরও শত শত ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে। যার ফলে বিমানবন্দরে যাত্রীরা আটকে পড়েছেন। শেষ মুহূর্তের জন্য অন্যান্য বিমান সংস্থায় বুকিংয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা ছাড়া যাত্রীদের কাছে আর কোনও উপায় থাকছে না। অনেককেই ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করছেন। 

 

শনিবারও একই বিশৃঙ্খলার ছবি উঠে এসেছে। সঙ্কটের পঞ্চম দিনেও আজ সকাল থেকে দিল্লি এবং মুম্বাই বিমানবন্দরে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য সংস্থার বিমানের টিকিটের দাম হু হু করে বাড়ছে। ফলে নাভিশ্বাস অবস্থা যাত্রীদের। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করেছে। আইন মেনে বিমান ভাড়া নেওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। 

 

সরকার এখন 'ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন' আদেশ স্থগিত রেখেছে। আশা করছে যে, তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বিমান পরিবহন মন্ত্রী বলেছেন যে, ইন্ডিগোর সংকট এখন সমাধানের পথে এবং বিমান সংস্থাটি পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ শুরু করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। ইন্ডিগোর সিইও এলবার্স শুক্রবারই জানিয়েছিলেন, অবস্থা স্বাভাবিক হতে ১৫ ডিসেম্বর হয়ে যাবে।