আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে জাল ও নিম্নমানের ওষুধ নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র। এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এবার থেকে দেশের প্রতিটি খুচরো ও পাইকারি ওষুধের দোকানে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদর্শন করতে হবে ফার্মাকোভিজিল্যান্স প্রোগ্রামের কিউআর কোড এবং টোল-ফ্রি নম্বর (1800-180-2034)।
ওষুধ খাওয়ার পর কোনওরকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এই নম্বরে ফোন দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন রোগীরা। তৈরি রাখা হবে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। জানা গিয়েছে, ফার্মাকোভিজিল্যান্স প্রোগ্রামের ১৮তম ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এরপর কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে যাতে দেশের প্রতিটি ওষুধের দোকানে স্পষ্ট স্থানে কিউআর কোড ও টোল-ফ্রি নম্বর প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়।
চিকিৎসক মহলে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি উঠছিল যে ভেজাল বা পরীক্ষায় ফেল করা ওষুধ সম্পর্কে চিকিৎসকদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য সময়মতো পৌঁছায় না। যার ফলে চিকিৎসা ও রোগীর সুরক্ষা দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কিউআর কোড ব্যবস্থা চালু হলে ADR Monitoring System (ADRMS)-এ একটি স্ক্যানেই কেন্দ্রে তথ্য পাঠানো সম্ভব হবে, যা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ভূমিকা নেবে।

কেন্দ্র জানিয়েছে, ‘দেশব্যাপী রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ফার্মাকোভিজিল্যান্স ব্যবস্থা শক্তিশালী করাই এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য। প্রতিটি দোকানে কিউআর কোড এবং টোল-ফ্রি নম্বর প্রদর্শন করতেই হবে।’
ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI)-র দপ্তর থেকেও দ্রুত নির্দেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি জোনাল অফিস ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাপস প্রামাণিক জানান, ‘ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয়ে রোগীর আস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিউআর কোড ও টোল-ফ্রি নম্বর প্রদর্শন করা নিঃসন্দেহে স্বচ্ছ ও রোগী-কেন্দ্রিক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে কোনও ওষুধে প্রতিক্রিয়া হলে রোগী সরাসরি রিপোর্ট করতে পারবেন, যা ফার্মাকোভিজিল্যান্সকে শক্তিশালী করবে।’
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘দিনদিন বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের সংখ্যা বেড়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন কোন ওষুধ আসল আর কোনটি ভেজাল? শুধু দোকানে নির্দেশ ঝোলানো যথেষ্ট নয়। নিয়মিত পরিদর্শন, নমুনা পরীক্ষা, দ্রুত রিপোর্ট, লাইসেন্স বাতিল এবং কঠোর শাস্তি এই ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না করলে এই উদ্যোগটি পুরো সফল হবে না। ভেজাল ওষুধ ঠেকানো প্রশাসনের দায়িত্ব, সাধারণ মানুষের নয়।’
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট এবং প্রশাসন এই তিন পক্ষ যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে, তবে দেশ আরও নিরাপদ, বিশ্বাসযোগ্য ও আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে এগোতে পারবে।’
কেন্দ্রের নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে দেশের যেকোনও ফার্মাসি থেকে সাধারণ মানুষ নিজেই সহজে ADR রিপোর্ট করতে পারবেন। ফলে দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ, রোগীর সুরক্ষা এবং চিকিৎসা পরিষেবা আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
