আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের বেসামরিক উড়ান পরিষেবা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের অভূতপূর্ব সংকটের কারণে। হাজার হাজার যাত্রী বিমানবন্দরে আটকে রয়েছেন, বহু ফ্লাইট বাতিল বা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগোর রাজনৈতিক দান ও নির্বাচনী বন্ড কেনা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে যে ইন্ডিগোকে সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল এবং তারই ফলে বাজারে একচেটিয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ইন্টারগ্লোব গ্রুপ, যারা ইন্ডিগো পরিচালনা করে, তারা মোট ৩৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল। পরিবহণ খাতে এটিই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অনুদান বলে জানা গেছে। তিনটি সংস্থা—InterGlobe Aviation, InterGlobe Air Transport এবং InterGlobe Real Estate Ventures—মোট ৩৬টি বন্ড কিনেছিল, যার মধ্যে ৩১টি কেনা হয়েছিল ২০১৯ সালের মে মাসে এবং বাকি বন্ড কেনা হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে।
ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারগ্লোবের মালিক রাহুল ভাটিয়া ২০২১ সালের এপ্রিলে আরও ২০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে এই সময়েই কোভিড মহামারির কারণে বিমান পরিবহণ শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি ছিল। এর পাশাপাশি স্পাইসজেটই একমাত্র অন্য বিমান সংস্থা যারা নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল। তারা ২০২১ সালে ৬৫ লক্ষ টাকার ২০টি বন্ড ক্রয় করেছিল।
এখন বিরোধী দল কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে—এই দানের পরবর্তী বছরগুলিতে কীভাবে ইন্ডিগো বাজারের ৬৩ শতাংশ শেয়ার দখল করল এবং কেন সরকার তাদের এত সুবিধা দিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকার সচেতনভাবে বিমান শিল্পে প্রতিযোগিতা কমিয়ে একটি ডুয়োপলি বা দু’কর্তৃত্বশীল বাজার তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম বলেন, “এখন মানুষকে ভাবতে হবে কীভাবে একটি প্রাণবন্ত প্রতিযোগিতামূলক বিমান শিল্প ধীরে ধীরে দুটি বড় সংস্থার দখলে চলে গেল, এবং কেন এমনটা ঘটতে দেওয়া হল।”
কংগ্রেসের সাংসদ শশীকান্ত সেন্থিল আরও অভিযোগ করেন যে, সরকার এবং DGCA ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কর্মঘণ্টা সংক্রান্ত নতুন Flight Duty Time Limitation (FDTL) বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এই নিয়ম ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হলেও, ইন্ডিগো তা আংশিকভাবে কার্যকর করে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে এবং সম্পূর্ণভাবে ১ নভেম্বর থেকে।
সেন্থিল প্রশ্ন তোলেন, “সরকার কি কখনও ইন্ডিগোকে সতর্কবার্তা দিয়েছে? নাকি নির্বাচনী বন্ড কেনার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?”
তার দাবি, “এই সংকট হঠাৎ তৈরি হয়নি। এটি কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার সরকারি নীতির ফল।”
কংগ্রেস আরও অভিযোগ করে যে, কেন্দ্রীয় সরকার বারবার এক নির্দিষ্ট কর্পোরেট গোষ্ঠীকে বিমানবন্দর পরিচালনার অধিকার দিয়েছে, যা বাজারে একচেটিয়া প্রবণতা বাড়িয়েছে। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, একই নীতি ইন্ডিগোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—নাগরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী কীরণ রামমোহন নাইডু কি দায়িত্ব নেবেন, নাকি সাধারণ এক বিবৃতির আড়ালে সরকার পরিস্থিতিকে এড়িয়ে যাবে? বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছে যেখানে দেখানো হবে সরকার কীভাবে ইন্ডিগোকে নিয়ম মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল।
এখন কেন্দ্রীয় সরকার মুখ খোলে কি না, এবং যাত্রীদের দুর্ভোগের জন্য কে দায় নেবে—সেই দিকেই নজর দেশের সাধারণ মানুষের।
