আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের বিষয়ে একটি নতুন নীতি জারি করেছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, এই নির্দেশিকা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, সেনাকর্মীরা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেন শুধুমাত্র “দেখা ও নজরদারির” উদ্দেশ্যে। ইনস্টাগ্রামে কোনও মন্তব্য, মতামত বা প্রতিক্রিয়া জানানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।


মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন যেমন স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং সিগন্যাল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। সেনাকর্মীরা এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে সাধারণ ও unclassified তথ্য আদানপ্রদান করতে পারবেন, তবে শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের দায়িত্ব থাকবে, যাতে সঠিক ব্যক্তির কাছেই বার্তা পাঠানো হয় এবং কোনও সংবেদনশীল তথ্য ভুল হাতে না পৌঁছয়।


ইউটিউব, এক্স, কুয়োরা এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলিকে ‘প্যাসিভ ইউজ’-এর মধ্যে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, তথ্য সংগ্রহ বা জ্ঞান অর্জনের জন্য এগুলি দেখা যেতে পারে, কিন্তু কোনও ব্যবহারকারী-তৈরি কনটেন্ট আপলোড করা বা বার্তা শেয়ার করা যাবে না। লিঙ্কডইন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কড়া সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। 


এই নির্দেশিকা জারি করেছে সেনা সদর দপ্তর, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে। এর ফলে আগের সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইন আপডেট করে ইনস্টাগ্রামকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।


এই নীতি নিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর মন্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, জেনারেশন জেড-এর তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভ্যস্ত হয়েই সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন, যা একটি বাস্তব সমস্যা তৈরি করছে। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে নতুন ক্যাডেটরা প্রথমেই মোবাইল ফোন কোথায় লুকোনো আছে তা খুঁজতে শুরু করছে। 


তবে জেনারেল দ্বিবেদী স্পষ্ট করেন, আজকের দিনে স্মার্টফোন একটি “প্রয়োজনীয় জিনিস”। পরিবারের থেকে দূরে থাকা সেনাদের জন্য স্মার্টফোনই প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সন্তানের প্রথম কান্না বা পরিবারের খোঁজখবর এই সব কিছু জানার সুযোগ দেয় স্মার্টফোন। পাশাপাশি, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর, কারণ মাঠে বহু বই বহন করা সম্ভব নয়।


তিনি ‘রিঅ্যাক্ট’ এবং ‘রেসপন্ড’-এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, সেনাবাহিনী কখনও আবেগে প্রতিক্রিয়া জানায় না, বরং ভেবেচিন্তে জবাব দেয়। সেই কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখার অনুমতি থাকলেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নিষিদ্ধ। এই সংযত নীতির মাধ্যমে সেনাবাহিনী শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ভারতীয় সেনা তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দেয় না, সুচিন্তিতভাবে জবাব দেয়।