আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে শ্রীলঙ্কা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানরত একটি নিম্নচাপের প্রভাবে রবিবার থেকেই তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী চেন্নাইকেও সতর্ক করা হয়েছে। চেন্নাই আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র চারটি জেলায় — তিরুভারুর, নাগাপট্টিনম, তাঞ্জাভুর এবং কারাইকাল অঞ্চলে জারি করেছে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই এলাকাগুলিতে রবিবার ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি, রামনাথপুরম, শিবগঙ্গাইসহ আরও পাঁচটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।


আবহাওয়া অধিদফতরের আরও পূর্বাভাস বলছে, আরিয়ালুর, কুড্ডলোর, ময়িলাদুথুরাই, নাগাপট্টিনম, তাঞ্জাভুর, তিরুভারুর এবং ভিল্লুপুরম জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি ও কারাইকালের দিকেও এমন আবহাওয়া বজায় থাকবে বলে জানানো হয়েছে।


১৭ নভেম্বর তামিলনাড়ুর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর। কিছু অঞ্চলে বজ্রঝড় ও বিদ্যুৎ চমকানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। তিরুভাল্লুর, চেন্নাই, কাঞ্চিপুরম, চেঙ্গালপট্টু, ভিল্লুপুরম, কল্লাকুরিচি, কুড্ডলোর, ময়িলাদুথুরাই, নাগাপট্টিনম, তিরুভারুর ও তাঞ্জাভুরে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।


আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের এই নিম্নচাপ এলাকা ১৬ নভেম্বর সকাল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় স্থির অবস্থায় ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত ঘূর্ণাবর্তটির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ঊর্ধ্বমুখে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হেলে রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


এদিকে, দক্ষিণ বাংলাদেশ এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখনও একটি উচ্চ-স্তরের ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্ব ভারতের কিছু অঞ্চলেও বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই সঙ্গে, দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগর ও দক্ষিণ কেরালা উপকূলের সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ০.৯ কিলোমিটার উচ্চতায় আরেকটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি সমগ্র দক্ষিণ ভারতের বৃষ্টিপাতের দিকে প্রভাব ফেলছে।


আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুক্রবার যে ঘূর্ণাবর্তটি তৈরি হয়েছিল, সেটিই পরবর্তীতে রূপ নেয় দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ এলাকায়। শনিবার থেকে সক্রিয় এই নিম্নচাপ আবারও উত্তরপূর্ব মৌসুমী বৃষ্টিকে জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চেন্নাই ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। ড্রেন পরিষ্কার, ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে অপ্রয়োজনীয় বাইরে না বেরোতে এবং সমুদ্রে না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান নিম্নচাপটি শক্তিশালী না হলেও এর ধীর গতির কারণে এর বৃষ্টি প্রভাব বেশ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি ও বন্যার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।