বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের (World Gold Council – WGC) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, স্বর্ণ এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ETF) ভারতীয়দের বিনিয়োগ অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী তৃতীয় সর্বোচ্চ ছিল। যেখানে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ETF থেকে বড় পরিমাণে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন, সেখানে ভারতের বাজারে বিনিয়োগের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
2
9
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ভারতীয় স্বর্ণ ETF-এ মোট বিনিয়োগ বিশ্বে পঞ্চম সর্বোচ্চ ছিল। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইনফ্লো শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই এসেছে, যা বাজারে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের শক্তিশালী বিশ্বাস ও আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। WGC-এর তথ্য বলছে, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত স্বর্ণ ETF-এ ভারতের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২.৯১ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৮৪৯.৮ মিলিয়ন ডলার অক্টোবরেই এসেছে।
3
9
যদিও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী প্রবণতায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে ৭৭.৬ মিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য দেশে ৩৮.৩ মিলিয়ন ডলার আউটফ্লো রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ভারতের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
4
9
স্বর্ণ ETF-এ বিনিয়োগের এই ওঠানামা সরাসরি স্বর্ণের মূল্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ১৭ অক্টোবর স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৪,৩৮১.৫৮ ডলার প্রতি আউন্স—এক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তবে পরে কিছুটা সংশোধন হয়ে সাপ্তাহিক শেষে এটি দাঁড়ায় ৪,০৮৩.৬০ ডলার প্রতি আউন্সে।
5
9
ভারতেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ১৭ অক্টোবর দেশে স্বর্ণের দাম প্রতি ১০ গ্রামে ১,৩০,৮৭৪-এ পৌঁছানোর পর তা নেমে বর্তমানে প্রায় ১,২৪,৭৯৪ হয়েছে। দাম বাড়া ও উৎসব সিজন মিলিয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে স্বর্ণ ETF-এ ভারতীয়দের চাহিদা বেড়েছে।
6
9
অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণ ETF-এ সর্বোচ্চ ইনফ্লো রেকর্ড করা হয়েছে—৬.৩৩ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন ৪.৫১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে, আর তার পরেই ভারত। জাপানও প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে অক্টোবর মাসে। অপরদিকে, স্বর্ণের দামের উত্থানকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু দেশ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যে আউটফ্লো হয়েছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার, জার্মানিতে ১.১৭ বিলিয়ন ডলার, পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি এবং তুরস্কেও বিনিয়োগকারীরা রিডেম্পশন করেছেন।
7
9
৭ নভেম্বর পর্যন্ত বছরের হিসাব বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট স্বর্ণ ETF বিনিয়োগ ৪২.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের (১২.৯৫ বিলিয়ন) তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। সুইজারল্যান্ড রয়েছে তৃতীয় স্থানে ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে, এরপর যুক্তরাজ্য ৩.০২ বিলিয়ন, আর তারপর ভারত।
8
9
WGC বলছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা, বাণিজ্য যুদ্ধের অনিশ্চয়তা, এবং বাজারের অস্থিরতার কারণে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন রূপে স্বর্ণ বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালে স্বর্ণ ETF-এ প্রবাহ ২০২০ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বার, কয়েন ও ETF—সব মিলিয়ে ৫৩৭ টন স্বর্ণের বিনিয়োগ হয়েছে, যার মধ্যে ETF একাই ২২২ টন যোগ করেছে।
9
9
৭ নভেম্বর পর্যন্ত স্বর্ণ ETF-গুলোর মোট হোল্ডিং দাঁড়িয়েছে ৩,৮৯৫ টন, যা ২০২০ সালের সর্বোচ্চ ৩,৯২৯ টন-এর খুব কাছাকাছি। WGC জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে স্বর্ণ ETF-এ বাড়তি ইনফ্লো স্বর্ণের দাম বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে, যা একটি ‘ভিরচুয়াস সার্কেল’ তৈরি করেছে—দাম বাড়ায় বিনিয়োগ বাড়ছে, আর বিনিয়োগ বাড়ায় দামও আরও চাঙ্গা হচ্ছে।