আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবার এসআইআর আতঙ্কের অভিযোগে এক মহিলা আত্মঘাতী হলেন মুর্শিদাবাদ জেলায়। রবিবার ভোরে বেলডাঙা থানার সুরুলিয়া এলাকায় মালগাড়ির সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন শাকিলা বেওয়া নামে সুরুলিয়া-গেটপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা। 

গত ৪ নভেম্বর রাজ্য জুড়ে এসআইআর শুরুর পর এই নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট তিনজন ব্যক্তি আত্মঘাতী হলেন এবং আরও দু'জন ব্যক্তি এসআইআর আতঙ্কে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এসআইআর শুরুর প্রথম দিনই কান্দি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগডাঙ্গা এলাকায় মোহন শেখ নামে বছর পঞ্চান্নর এক কৃষক বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন। ঘটনার দিন ওই পরিবারে তরফ থেকে দাবী করা হয় ২০০২-এর ভোটের তালিকায় মোহনের নাম না থাকায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন এবং সেই কারণেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। 


এরপর গত ৬ তারিখ বহরমপুর থানার গান্ধী কলোনী এলাকায় তারক সাহা নামে এক ঝাল মুড়ি ব্যবসায়ী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। ওই ব্যক্তির নাম ২০০২-এর ভোটার তালিকায় ছিল না বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ থানা এলাকার জিতেন রায় নামে এক ব্যক্তি এবং নওদা থানা এলাকার বাসিন্দা বাসিন্দা ইসরাইল মোল্লা নামে অপর এক ব্যক্তি এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে তাদের পরিবারের তরফ থেকে দাবী করা হয়েছে। 

 

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশে ইতিমধ্যেই শাসক দলের প্রতিনিধিরা এসআইআর আতঙ্কে মুর্শিদাবাদে মৃত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলাদা করে দেখা করে তাদের সকলের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এবং ৩ লক্ষ টাকা করে  আর্থিক সাহায্য করেছেন বলে জানা গিয়েছে। 


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরুলিয়া গেটপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাকিলা বেওয়া নামে ওই মহিলা এসআইআর শুরুর পর থেকেই আতঙ্কে ছিলেন। ওই মহিলা নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে বহুবার বলেছিলেন এসআইআর তালিকা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। 


মৃত শাকিলার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন,শাকিলা রেললাইনের উপর গিয়ে শুয়ে পড়েন। সেই সময় বহরমপুরের দিক থেকে বেলডাঙাগামী একটি মালগাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বহরমপুর জিআরপি থানা আধিকারিকেরা ইতিমধ্যে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছেন।


মৃত ওই মহিলার ভাইপো নাসিমুল শেখের অভিযোগ,' ২০০২ -এর ভোটার তালিকায় আমার কাকিমার নাম থাকলেও ওই তালিকায় কাকার নাম এবং বয়স ভুল রয়েছে। কাকিমার কাছে যে নথি রয়েছে তাতে কোথাও আমার কাকার নাম লেখা রয়েছে 'হচিউদ্দিন শেখ'। ভোটার তালিকায় কাকার নাম রয়েছে 'হচিউদ্দিন'। কাকার নামে বিভ্রাট থাকায় আমার কাকিমার ধারণা হয়েছিল এসআইআর শেষে তার নাম বাদ যাবে এবং পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। কাকিমার দুই মেয়ের নামও ২০০২ এর ভোটার তালিকায় না থাকায় তার আতঙ্ক আরও বেড়েছিল। বহুবার তাকে আমরা বুঝিয়েছিলাম কিন্তু  কোনও কাজ হয়নি। রবিবার সকালে এসআইআর আতঙ্কে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।'


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৫ বছর আগে ওই মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তারপর থেকেই সুরুলিয়া এলাকায় তিনি একাই থাকতেন। শাকিলার দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রবিবার সকাল ছ'টা নাগাদ ওই মহিলা বাড়ি থেকে একা বেরিয়ে যান। তারপর রেললাইনে গিয়ে আত্মঘাতী হন। 
মৃত ওই মহিলার বড় জামাই সেকেন্দার আলির অভিযোগ,' আমার শাশুড়ি ক্রমাগত বলে যেতেন পুলিশ এবং মোদি ও যোগী তাকে ধরে নিয়ে যাবে। বহুবার তাকে আমরা বলেছিলাম এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক না করতে। এসআইআর আতঙ্কে আমার শাশুড়ি ভীত হয়ে পড়ায় কিছুদিন আমরা তাকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েও রেখেছিলাম। রবিবার সকালে এসআইআর আতঙ্কে হঠাৎই আমার শাশুড়ি আত্মঘাতী হয়েছেন।'