আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা হেমন্ত সোরেনের হঠাৎ দিল্লি সফরকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, হেমন্ত ও তাঁর স্ত্রী, বিধায়ক কল্যাণা সোরেন, বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটে (এনডিএ) যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বিজেপির সমর্থনে ঝাড়খণ্ডে নতুন সরকার গঠনের পথ খুলে যেতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন।


জেএমএম-এর সঙ্গে মহাজোট তথা ইন্ডিয়া ব্লকের অস্বস্তি গত কয়েক মাস ধরেই প্রকাশ্যে আসছিল। বিশেষ করে বিহার নির্বাচনের আগে থেকেই দলগুলির মধ্যে আসন-বণ্টন নিয়ে মতভেদ তীব্র হয়। হেমন্ত সোরেন চেয়েছিলেন, বিহারের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে জেএমএম-কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে। কিন্তু কংগ্রেস ও আরজেডির সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতা না হওয়ায় জেএমএম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে জেএমএমের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত।


গত বছরের লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়েও দলের ভিতরে ক্ষোভ তৈরি হয়। ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে ৮১টির মধ্যে জেএমএম ৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, কংগ্রেসকে ৩০, আরজেডিকে সাত এবং বাম দলগুলোকে চারটি আসন ছেড়ে দেয়। ফলাফলে জেএমএম পায় ৩৪টি, কংগ্রেস ১৬টি, আরজেডি চারটি এবং সিপিআই(এমএল)-লিবারেশন পায় দুটি আসন। অপরদিকে বিজেপি-সহ এনডিএ জোটের হাতে বর্তমানে ২৪টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে বিজেপির দখলে রয়েছে ২১টি।


এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসেও বড়সড় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কংগ্রেসের অন্তত আটজন বিধায়ক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে পা বাড়াতে পারেন, যা হেমন্ত সোরেনের পরবর্তী সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা নিতে পারে। যদিও একদল মনে করছে ইডির হাত থেকে বাঁচতেই হয়তো জমি কেলেঙ্কারির অন্যতম অভিযুক্ত হেমন্ত হয়তো শেষে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারে। ইতিমধ্যেই যে নতুন বিল হয়েছে সেখানে উল্লেখ করা রয়েছে যদি একজন মুখ্যমন্ত্রী ৩১ দিন পর্যন্ত হেপাজতে থাকেন তাহলে সেখানে তাকে পদত্যাগ করতে হতে পারে। সোরেনের মাথায় সেটাও বড় পাথর হয়ে চেপে বসেছে। যদিও বিলটি এখনও পাস হয়নি। তবে সেটি সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে বলে বাড়তি সতর্ক হতে চাইছেন হেমন্ত সোরেন। 


এদিকে কর্নাটকেও রাজনৈতিক অস্থিরতা কম নয়। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের জল্পনা অব্যাহত। যদিও দু’জনের পরপর দুটি ‘ব্রেকফাস্ট মিটিং’-এর পর কংগ্রেস নেতৃত্ব ঐক্যের বার্তা দিয়েছে, তবুও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বুধবার সিদ্দারামাইয়া হঠাৎ দিল্লি রওনা হওয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সফর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং দিল্লিতে তিনি শুধুমাত্র একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন। শিবকুমারও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “এতে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নেই।”


যদিও সিদ্দারামাইয়া সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছিলেন শিবকুমারের সঙ্গে তার সদর্থক কথা হয়েছে। তারা ভাইয়ের মতো সম্পর্ক বজায় রাখেন। ২০২৮ সালে তারা একসঙ্গে কাজ করবেন। তাতেই তাদের দলের ক্ষমতা বাড়বে। তিনি আরও দাবি করেছেন দ্রুত কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে তিনি শিবকুমারকে নিয়ে যাবেন। সেখানে রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে তারা দুজনেই বৈঠক করবেন। 


রাজনৈতিক মহলের মতে, কর্নাটক কংগ্রেসে ক্ষমতার লড়াই এত সহজে থামবে না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও পরিস্থিতি সামাল দিতে দলীয় পর্যবেক্ষকদের সক্রিয় করেছে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাদের ‘ভোট চোরি বিরোধী’ কর্মসূচিতে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে।


ঝাড়খণ্ড ও কর্নাটক—দু’টি রাজ্যেই চলা রাজনৈতিক টানাপোড়েন আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষত হেমন্ত সোরেনের দিল্লি সফর এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস রাজ্য রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। এই অবস্থা আগামীদিনে জাতীয় রাজনীতিতে কোন নতুন মোড় নিয়ে আসে সেদিকেই সকলের নজর থাকবে।