আজকাল ওয়েবডেস্ক: হেলমেট না পরে স্কুটার চালানোর জন্য এক ব্যক্তিকে যখন প্রায় ২১ লক্ষ টাকার চালান ধরানো হল, তখন নিজে তো বটেই—সমাজমাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন পড়ে যায়। তাঁর স্কুটারের দামই যেখানে মাত্র এক লক্ষের কিছু বেশি, সেখানে চালানের অঙ্ক দেখানো হয়েছে ২০,৭৪,০০০ টাকা। চালানের সেই ছবি চোখের পলকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে পুলিশ ভুল স্বীকার করে জরিমানার অঙ্ক কমিয়ে মাত্র ৪,০০০ টাকায় নিয়ে আসে।


ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার, উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগর জেলায়। নিউ মাণ্ডি এলাকায় নিয়মিত পুলিশি চেকিং চলাকালীন থামানো হয় স্কুটার আরোহী অমূল সিংহলকে। তিনি তখন হেলমেট পরে ছিলেন না। পাশাপাশি তাঁর কাছে স্কুটারের অপরিহার্য নথিপত্রও ছিল না বলে জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা। এসব কারণে তাঁর স্কুটারটি জব্দ করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি চালানও ইস্যু করা হয়।


কিন্তু চালান হাতে পেয়ে অমূল হতবাক—কারণ সেখানে জরিমানার অঙ্ক লেখা ছিল ২০,৭৪,০০০ টাকা! আতঙ্কিত হয়ে তিনি সেই চালানের ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ছবি ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখে বুঝতে পারে যে চালানটি ইস্যু করতে গিয়ে একটি গুরুতর প্রযুক্তিগত ভুল হয়েছে। লজ্জায় পড়ে তারা জরিমানার অঙ্ক কমিয়ে সঠিক পরিমাণ অর্থাৎ ৪,০০০ টাকা নির্ধারণ করে।


মুজফ্ফরনগরের ট্র্যাফিক সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ অতুল চৌবে জানান—এই ভুল হয়েছে চালান প্রস্তুতকারী সাব-ইনস্পেক্টরের ত্রুটির কারণে। তিনি বলেন, “ওই ক্ষেত্রে মোটর ভেহিকলস অ্যাক্টের ২০৭ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাব-ইনস্পেক্টর ‘২০৭’-এর পাশে ‘MV Act’ লিখতে ভুলে যান।”


ফলে ‘২০৭’ এবং এই ধারার অধীনে ন্যূনতম ৪,০০০ টাকার জরিমানার সংখ্যা একত্রে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় ২০,৭৪,০০০—একেবারে অবিশ্বাস্য একটি অঙ্ক! চৌবে আরও জানান, প্রকৃতপক্ষে অভিযুক্তকে মাত্র ৪,০০০ টাকা জরিমানা দিলেই হবে।


মোটর ভেহিকলস অ্যাক্টের ২০৭ ধারা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকলে পুলিশ যে কোনো যানবাহন বাজেয়াপ্ত করতে পারে। অমূল সিংহলের ক্ষেত্রেও সেই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল।


এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, সরকারি নথিপত্র তৈরির সময় সামান্য অসতর্কতাও কত বড় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, হেলমেট না পরা ও নথি ছাড়া যানবাহন চালানোর মতো ছোট ভুলও যে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা স্পষ্ট করে দিল এই ঘটনা। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন—যদি তিনি চালানের অঙ্ক দেখে ভয় পেয়ে টাকা দিতে ছুটে যেতেন, তবে হয়তো কেউ বিষয়টি টেরই পেত না!


অবশেষে ভুল ধরা পড়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অমূল। তবে পুলিশও সতর্ক—এই ধরনের ভুল আর যাতে না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


স্কুটার চালকের জন্য এটি যেমন রীতিমতো মানসিক ধাক্কা ছিল, তেমনই সাধারণ মানুষের কাছে এই ঘটনা একটি বার্তা—ট্রাফিক নিয়ম মানলেই শুধু জরিমানা নয়, অপ্রত্যাশিত ঝামেলা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।