আজকাল ওয়েবডেস্ক: আরও একটি কেন্দ্রীয় খাত বেসরকারিকরণের দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, সরকার ভারতের কঠোর সুরক্ষিত পারমাণবিক শক্তি খাতে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এই পদক্ষেপের ফলে পরমাণু শিল্পে কয়েক দশক ধরে একচেটিয়া রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মোদির তৃতীয় মেয়াদের সবচেয়ে সাহসী অর্থনৈতিক সংস্কারগুলির মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত হবে।
বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি স্টার্ট আপ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তেলঙ্গানার হায়দরাবাদে স্কাইরুটের ইনফিনিটি ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “আজ দেশ মহাকাশ শিল্পে এক অভূতপূর্ব সুযোগের সাক্ষী হচ্ছে এবং বেসরকারি খাতের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের মহাকাশ শিল্প এক বিরাট অগ্রগতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “স্কাইরুটের ইনফিনিটি ক্যাম্পাস ভারতের নতুন চিন্তাভাবনা, উদ্ভাবন এবং যুবশক্তির প্রতিফলন ঘটায় এবং দেশের তরুণদের উদ্ভাবন, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং উদ্যোগকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।”
সংস্থার দুই প্রতিষ্ঠাতা পবন কুমার চন্দনা এবং নাগা ভারত ডাকাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি বলেন, “এই দুই তরুণ উদ্যোক্তা দেশজুড়ে অসংখ্য তরুণ মহাকাশ উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁরা নিজেদের উপর আস্থা রেখেছিলেন, ঝুঁকি নিতে পিছপা হননি। ফলস্বরূপ, গোটা দেশ আজ তাঁদের সাফল্যে গর্বিত।”
এরপরেই প্রধানমন্ত্রী ২০২০-২১ সালে মহাকাশ খাতের ব্যাপক উদারীকরণের সঙ্গে পরমাণু খাতের বেসরকারিকরণের তুলনা টেনে আনেন। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদি বলেন, “যেভাবে আমরা মহাকাশ খাত উন্মুক্ত করেছিলাম এবং তার ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে। ৩০০টিরও বেশি স্টার্টআপ, কোটি কোটি টাকার বেসরকারি বিনিয়োগ এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেখেছি। আমরা এখন পারমাণবিক শক্তিতে একই রকম ঐতিহাসিক সংস্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
মহাকাশ খাতের সাফল্য উল্লেখ করে মোদি জানান, বেসরকারি পুঁজি এবং উদ্ভাবন উৎক্ষেপণ খরচ কমিয়েছে এবং স্পেসএক্স এবং ওয়ানওয়েবের মতো বড় সংস্থাকে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করেছে। পারমাণবিক শক্তিতেও এই পথ অনুসরণ করা যেতে পারে। তাঁর দাবি, “যখন আমরা দরজা খুলে দিয়েছিলাম, তখন প্রতিভা এবং পুঁজি ছুটে এসেছিল। সঠিক নীতিগত পরিবেশ তৈরি করার পরে পারমাণবিক ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।”
এখন পর্যন্ত, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন একমাত্র পারমাণবিক শক্তি বিভাগ এবং এর প্রধান সংস্থা, নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (NPCIL) এর অধীনে ছিল। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে চুল্লির মালিকানা বা পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হত না। কেবল যন্ত্রাংশ বা পরিষেবা সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ভারত ২০৩২ সালের মধ্যে তার পারমাণবিক ক্ষমতা ৮,০০০ মেগাওয়াট থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি করে ২২,৪৮০ মেগাওয়াটে নিয়ে যেতে চায়। সরকারি সূত্রে দাবি, নতুন কাঠামোটি বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ছোট মডুলার রিঅ্যাক্টর (SMR) তৈরি এবং পরিচালনা, নতুন বৃহৎ রিঅ্যাক্টরের জন্য NPCIL-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধানের অধীনে গ্রিনফিল্ড পারমাণবিক প্রকল্পে বিনিয়োগের অনুমতি দিতে পারে।
কেন্দ্র বহুদিন ধরে এই সংক্রান্ত পরিকল্পনা করছে। নীতি আয়োগ এই বছরের শুরুতে একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ জমা দিয়েছে। পারমাণবিক শক্তি বিভাগ সম্ভাব্য মডেলগুলি নিয়ে ভারতীয় সংস্থা (টাটা, রিলায়েন্স, আদানি, এলএন্ডটি) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির (ওয়েস্টিংহাউস, ইডিএফ, রোসাটম) সঙ্গে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের বাজেটে আইন পাস করা হতে পারে। ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে প্রথম বেসরকারি পারমাণবিক প্রকল্প চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতের চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কয়লা ব্যবহার বন্ধ করতে হলে পরিষ্কার বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বেসরকারি অংশগ্রহণ নতুন মূলধন, দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নতুন প্রযুক্তি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এনপিসিআইএল অতীতে এই সব কারণে প্রকল্পে বিলম্ব এবং ব্যয় বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে।
এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে আমেরিকা, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি ভারতও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যক্তিগত মালিকানার অনুমতি দেবে। কিন্তু পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অধীনে কঠোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। এই ঘোষণার পরেই শেয়ার বাজার দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পারমাণবিক সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার, এল অ্যান্ড টি, ওয়ালচাঁদনগর ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ভেল (BHEL) এর শেয়ারের দাম ৩-৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
