আজকাল ওয়েবডেস্ক: বছর শেষের ছুটি কাটাতে গোয়া ট্রিপের প্ল্যান করেছিল পরিবার। নাচগান, খাওয়াদাওয়া, ঘোরাঘুরি, হাসিঠাট্টায় ভরপুর ট্রিপের প্ল্যান থাকলেও, পরিণতি হল তার মর্মান্তিক। যে ছুটিতে তুমুল হুল্লোড়ের পরিকল্পনা ছিল, মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল। গোটা পরিবার হারিয়ে হাহাকার এক তরুণীর।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দিল্লির বাসিন্দা ভাবনা যোশি ও তাঁর স্বামী বিনোদ কুমার ছুটি কাটাতে গোয়ায় গিয়েছিলেন। সঙ্গী ছিলেন ভাবনার আরও তিন বোন, অনিতা, সরোজ ও কমলা। ৪ ডিসেম্বর ট্রিপ শুরু হয় পাঁচজনের। শনিবার রাতে পৌঁছে গিয়েছিলেন নর্থ গোয়ার আরপোরায় বার্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবে। সেখানে সারারাত হুল্লোড়ের প্ল্যান ছিল।
নাইটক্লাবে পা রাখতেই ঘটল বিপত্তি। কয়েক মিনিটের মধ্যে নাইটক্লাবে দাউদাউ আগুন। নিমেষে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছিল এক ঘর থেকে আরেক ঘরে। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা এলাকা। দমবন্ধ হয়ে আসে সকলের। সরু পথ। কোনও মতে ঠেলাঠেলি করে পালাচ্ছিলেন পর্যটকরা। সেই সময়েই ভাবনাকে ধাক্কা দিয়ে নাইটক্লাব থেকে বের করে দেন বিনোদ। ভাবনা বেঁচে যান প্রাণে।
ভাবনার আরও তিন বোনকে বাঁচাতে নাইটক্লাবের ভিতরে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন বিনোদ। তখনই আটকে পড়ে। মাত্র দু'মিনিটের মধ্যে আগুনে ঝলসে যায় চারজনেই। নাইটক্লাবের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন ভাবনা। বারবার ফোন করছিলেন বিনোদের ফোনে। ফোন বাজলেও আর সাড়া মেলেনি।
পরিবারের সদস্যরাও জানিয়েছেন, দুই সন্তান এখনও জানে না দুর্ঘটনার খবর। দুই বোন নিখোঁজ বলেই জানানো হয়েছে। এক পরিবারের চারজনকে হারিয়ে গোটা পরিবারে শোকের ছায়া।
প্রসঙ্গত, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের জেরে গোয়ার নাইটক্লাবে আগুন লাগেনি। রবিবারেই ঘোষণা করেছিলেন গোয়ার ডিজিপি। কারণ নাইটক্লাব থেকে সিলিন্ডারগুলি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সোমবার পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানালেন, বৈদ্যুতিক আতশবাজি থেকে নাইটক্লাবে আগুন ছড়াতে পারে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অগ্নিকাণ্ড থেকে কোনও মতে বেঁচে যাওয়া দিল্লির পর্যটক রিয়া দাবি জানান, ডান্স ফ্লোরে নৃত্যশিল্পীরা যখন নাচ করছিলেন, তখন চারদিকে আতশবাজি ফাটছিল ৷ যা থেকে আগুন লাগতে পারে। ডান্স ফ্লোরের উপরেই আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছিল তখন। তারপরেই হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ৷
এদিকে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গিয়েছে, নাইটক্লাবের ড্রান্স ফ্লোরের ভিতরেই বৈদ্যুতিক আতশবাজি পোড়ানো হয়েছিল৷ তার জেরেই ক্লাবটিতে আগুন লেগে যায়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত নাইটক্লাবের প্রধান পরিচালক রাজীব মোদক, পরিচালক বিবেক সিং, বার ম্যানেজার রাজীব সিংহানিয়া এবং গেট ম্যানেজার রিয়াংশু ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
আরও জানা গেছে, নাইটক্লাবে মৃতদের মধ্যে ২০ জন কর্মী ছিলেন এবং পাঁচজন পর্যটক ছিলেন। মৃত কর্মীরা মূলত উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, অসম, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে চারজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। নিহতদের মৃতদেহ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী।
