আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি, ভারতের নানা রাজ্যে গত কয়েকদিনে এই ঘটনা বারেবারে ঘটেছে। এই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে স্রেফ বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচারিত হয়েছেন। কাউকে অকথ্য অত্যাচার করেছে পুলিশ, কাউকে মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে পা। দিল্লি পুলিশের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরেও দেশজুড়ে তুমুল হইচই। তার মাঝেই প্রকাশ্যে এল আরও একটি ঘটনা।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, জোর করে লাল কেল্লায় ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, এই অভিযোগে, বাংলাদেশি সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। প্রত্যেকের বয়স ২০-১৫ বছরের মধ্যেই।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনা প্রসঙ্গে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ওই পাঁচ যুবকের কাছ থেকেই বাংলাদেশের নথি উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই পাঁচ যুবকই দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। নথি উদ্ধারের পর, পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। বাকি তথ্য বিস্তারিত জানার জন্য, চলবে জিজ্ঞাসাবাদ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবসের আগে একটি দীর্ঘ সময়ে লাল কেল্লায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। চলতি বছরেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেই নিয়ম কার্যকরী হয়েছে। দিল্লি পুলিশের দাবি কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ওই পাঁচ যুবক লাল কেল্লায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এন্ট্রি পাস থেকে বৈধ কাগজ, তাঁদের কাছে কিছুই ছিল না বলে দিল্লি পুলিশ জানাচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে চিঠি লিখে ইতিমধ্যেই প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েছে দিল্লি পুলিশ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি থেকে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন, ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। সেসবের মাঝেই, সোমবার দিল্লি পুলিশের ওই চিঠির ঘটনায় নতুন করে সাফাই গান বিজেপির আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য। মমতার এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টের রিপ্লাইতে সোমবার সকালে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলায় মমতা যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তা শুধু ভুল নয়, বরং বিপজ্জনকভাবে উস্কানিমূলক। চিঠিতে স্পষ্ট লেখা থাকা সত্ত্বেও তিনি এদিন দাবি করেন, দিল্লি পুলিশের চিঠিতে কোথাও বাংলা বা বাঙালি ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়নি।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা পোস্ট করে লেখেন, ‘দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছে। এখানে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলতে তারা বোঝাতে চেয়েছে এমন একধরনের ভাষার রূপ, যার উপভাষা, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার থেকে অনেকটাই আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সরকারিভাষা শুধু ভিন্ন উচ্চারণেই নয়, বরং সেখানে এমন কিছু উপভাষা ব্যবহৃত হয়, যেমন সিলেটি, যা ভারতীয় বাঙালিদের কাছে কার্যত বোধগম্যই নয় বাংলা ভাষা বলে এমন কোনও একক ভাষা নেই যা সমস্ত ভিন্নতা ঢেকে দেয়। ‘বাঙালি’ মূলত শব্দটি জাতিগত পরিচয় বোঝায়, ভাষাগত ঐক্য নয়। সুতরাং দিল্লি পুলিশ যখন “বাংলাদেশি ভাষা” শব্দটি ব্যবহার করে, তখন সেটা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্যই। বাংলা ভাষার ভারতীয় সংস্করণ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য নয়।'
এর আগে, শনিবার গুরুগ্রাম পুলিশ জানিয়েছিল, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের জন্য তারা দশজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে। তাঁদের কাছ থেকে যেসব নথি উদ্ধার হয়েছে, তাতে তাঁদের বাংলাদেশি জাতীয়তা স্পষ্ট হয়েছে। গুরুগ্রাম পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘দশজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।‘
