আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির মেহরৌলিতে এক যুবতীকে নির্মম খুন করা হয়। এহেন খুনের ঘটনা সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে, এটি নামকরা বলিউড সিনেমা অজয় দেবগন অভিনীত 'দৃশ্যম' সিনেমার কাহিনির মতই ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। ঘটনার জেরে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ৪৭ বছর বয়সী শাদাব আলি তাঁর স্ত্রী ফাতিমাকে পরকীয়ার সন্দেহে হত্যা করেন। খুন করে বন্ধুদের সহযোগিতায় তাঁর দেহ মৃতদেহ কবরস্থানে গোপনে দাফন করেন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত শাদাব আলি উত্তরপ্রদেশের আমরোহার একজন পেশাদার চিত্রশিল্পী। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি কয়েকদিন ধরে তাঁর স্ত্রী ফাতিমাকে জোর করে কীটনাশক ও ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। এতে ফাতিমা আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে ১ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী'র মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর, শাদাব তাঁর দুই বন্ধু-শাহরুখ খান ও তানভীর- এর সহায়তায় স্ত্রী ফাতিমার মৃতদেহ একটি গাড়িতে করে মেহরৌলির এক কবরস্থানে নিয়ে যান। তারপর সেখানে রাতের অন্ধকারে দাফন করে দেন। ঘটনা গোপন রাখতে শাদাব অত্যন্ত কৌশলে ফাতিমার মোবাইল থেকে নিজের ফোনে একটি বার্তা পাঠান। তাতে লেখা ছিল, 'আমি পালিয়ে গিয়েছি। অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছি।' একইসঙ্গে তিনি ফাতিমার জামাকাপড় একটি খালে ফেলে দেন যাতে কোনও প্রমাণ না থাকে।
ঘটনার পর শাদাব ফের আমরোহায় পালিয়ে যান পুলিশকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। ১০ আগস্ট ফাতিমার এক বন্ধু মেহরৌলি থানায় তাঁর বান্ধবীর একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তিনি মনে করেছিলেন ফাতিমা অপহরণ হয়েছেন। ডায়েরি পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।
পুলিশি তদন্তের সময় উদ্ধার হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ফাতিমাকে অচেতন অবস্থায় শাদাব ও তাঁর দুই সহযোগীর সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপরই শাদাবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জোরাজুরি করা হলে প্রথমে তিনি দাবি করেন, ফাতিমার মৃতদেহ তিনি একটি খালে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে শাদাব স্বীকার করেন যে, তিনিই স্ত্রী'কে হত্যা করেছেন এবং কবরস্থানে দাফন করেছেন। তিনি আরও জানান, স্ত্রী ফাতিমার পরকীয়ার সন্দেহ থেকেই তিনি এই চরম সিদ্ধান্ত নেন।
পুলিশ আরও জানায়, হত্যার আগে ফাতিমাকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ফতেহপুর বেরির একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে প্রতিদিন তাঁকে কীটনাশক খাওয়ানো হত। ফাতিমা তখন আধা-মৃত অবস্থায় ছিলেন।
২ আগস্ট রাতে ফাতিমা মারা গেলে, শাদাব ও তাঁর সহযোগীরা মৃতদেহ গাড়িতে করে কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে দাফন করে দেন। অভিযুক্ত শাদাবের বয়ানের পর, ১৫ আগস্ট পুলিশ এক ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে ফাতিমার মৃতদেহ খুঁড়ে বার করেন।
বর্তমানে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাদাব আলি, এবং তাঁর দুই সহযোগী শাহরুখ খান ও তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেক সহযোগী এখনও পলাতক। পুলিশ ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানা গিয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড দিল্লিবাসীকে রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছে।
