আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত সপ্তাহে বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং সেই সুযোগে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় সরকারকে। বুধবার দিল্লি হাইকোর্ট ইন্ডিগো সঙ্কটের জন্য কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করেছে। 

দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি তুষার রাও গাদেলা প্রশ্ন করেন, “যদি কোনও সঙ্কট দেখা দেয়, তাহলে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলিকে কীভাবে সুবিধা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে? কীভাবে ৩৫ হাজার থেকে ৩৯ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যেতে পারে? কীভাবে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলি চার্জ নেওয়া শুরু করতে পারে? কীভাবে এটি ঘটতে পারে?”

আদালতের এই প্রশ্নের পরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র কী কী পদক্ষেপ করেছে তার খতিয়ান দেন সলিসিটর জেনারেল। তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে বিচারপতি ফের প্রশ্ন করেন, “সঙ্কট তৈরি হওয়ার পর এই সব কাজ করা হয়েছে। প্রশ্নটা এটা নয়। কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হল? আর কেন্দ্র কী করছিল?” আদালত আরও প্রশ্ন তুলেছে, কেন পাইলটদের অতিরিক্ত কাজ দেওয়া হয়েছিল এবং এটি প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানান, ডিজিসিএ ইন্ডিগোকে এই বিশৃঙ্খলার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। যার উত্তর ‘অত্যন্ত ক্ষমাপ্রার্থনা’ করে দিয়েছে বিমান সংস্থাটি। 

আদালত বলে, বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় তাদের প্রচেষ্টার ‘প্রশংসা’ করলেও, কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা প্রথমেই জানাতে হবে। আদালতের প্রশ্ন, “আমরা বলেছি যে আমরা কেন্দ্রর প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি। তবে, আমাদের যে বিষয়টি বিরক্ত করছে তা হল কীভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া হল, যার ফলে বিমানবন্দরে লক্ষ লক্ষ যাত্রী অসহায় হয়ে পড়লেন। এই ধরনের পরিস্থিতি কেবল যাত্রীদের অসুবিধার কারণই নয়, বরং দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। কারণ, বর্তমান সময়ে যাত্রীদের দ্রুত চলাচল অর্থনীতিকে সচল রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? পরিষেবা প্রদানকারীদের কর্মীরা যাতে দায়িত্বশীল আচরণ করেন তা নিশ্চিত করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?”

বিমানবন্দরে অপেক্ষারত যাত্রীদের ব্যাগের সারি। ছবি: সংগৃহীত।

গত মাসে বিমানকর্মীদের কাজের সময়সূচি বা ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন (এফডিটিএল)-এ সংশোধনী আনে ভারতের বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। সেই সংশোধনী অনুযায়ী, একজন বিমানকর্মীর দিনে আট ঘণ্টা, সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা, মাসে ১২৫ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বোচ্চ ১,০০০ ঘণ্টা কাজ করার কথা।

এই সংশোধনীর পরে সবচেয়ে বিপাকে পড়ে বিমান সংস্থা ইন্ডিগো। কর্মীসংখ্যায় টান পড়ে। যাত্রীদের চাপ সামলাতে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয় কর্তব্যরত কর্মীদের। পাইলট এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক কেবিন ক্রু না থাকায় শয়ে শয়ে উড়ান বাতিল করতে হয়। কখনও আবার বদলাতে হচ্ছে উড়ানের সময়সূচি। ইন্ডিগোর এই সঙ্কটের মধ্যেই হঠাৎ ভিড় এবং চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বিমানের ভাড়া দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়ে যায়। শেষ মুহূর্তের ইন্ডিগোর বিমানের বুকিং বাতিলের কারণে যাত্রীরা বিমানবন্দরেই আটকে পড়েন। বেশ কয়েকটি বিদেশী শহরে ফ্লাইটের ভাড়া দেশের অভ্যন্তরে অনেক ব্যস্ত রুটের তুলনায় কম। মুম্বই এবং দিল্লির মধ্যে ইকোনমি বিভাগে একমুখী টিকিটের ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। সাধারণত শেষ মুহূর্তে বুকিং করলে যে দ্বিমুখী টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।

বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলার জন্য কেন্দ্র ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। ডিজিসিএ বিমানসংস্থার শীতকালীন সময়সূচি কমিয়ে দিয়েছে। উড়ানের সংখ্যা ৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। ইন্ডিগো প্রতিদিন প্রায় ২,২০০টি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উড়ান পরিচালনা করে। যার অর্থ প্রতিদিন ১১০টি বিমান কম উড়বে ইন্ডিগোর। কেন্দ্র জানিয়েছে, খালি স্লট অন্য বিমানসংস্থার জন্য বরাদ্দ করা হবে।