আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার সন্ধের দিল্লির বিস্ফোরণ, গোটা দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে। তদন্তে বেলায় বেলায় উঠে আসছে মোড় ঘোরানো তথ্য। সোমবারের ঘটনার পর থেকেই নজরে উমর নবি এবং বিস্ফোরক গাড়ি। মঙ্গলবারে দুটি বিষয়ে আরও ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে বলে উল্লিখিত হয়েছে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকারীরা হুন্ডাই আই২০ গাড়িটির গতিবিধির চিরুণি তল্লাশি করতে গিয়ে পেয়েছেন চমকে ওঠা তথ্য। জানা গিয়েছে, ওই গাড়ি নিয়ে রীতিমতো অর্ধেক দিল্লি চষে বেড়িয়েছিলেন উমর। কর্মকর্তাদের মতে, লাল কেল্লা এলাকার কাছে বিস্ফোরণের আগে অভিযুক্তরা দিল্লির ছয়টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা ১২টিরও বেশি স্থানে ঘুরেছিল, সূত্রের খবর তেমনটাই।
তথ্য, উমর দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, মধ্য দিল্লি, নতুন দিল্লি জেলা, উত্তর দিল্লি এবং উত্তর পশ্চিম দিল্লি ঘুরে বেড়িয়েছিল। তারমধ্যে নেতাজি সুভাষ প্লেস, অশোক বিহার, কনট প্লেস (সিপি), রঞ্জিত ফ্লাইওভার, ডিলাইট সিনেমা, শহীদ ভগত সিং মার্গ এবং রোহতক রোডের মতো জায়গা পড়ে। তবে ঠিক কোন কারণে অর্ধেক দিল্লি ঘুরে দেখেছিল, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তদন্তকারী আধিকারিকেরা নানা জেলার, নানা সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন। দেখা হচ্ছে, যে ছ'জেলায় গিয়েছিল অভিযুক্তরা, সেখানে কোথায়, কখন এবং কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল, কারও সঙ্গে কথোপকথন চালিয়েছিল কি না, সেসব তথ্য।
মঙ্গলবারেই জানা যায়, HR26CE7674 নম্বরের আই২০ গাড়িটির মালিকানার রেকর্ড। সলমন নামের এক ব্যক্তির গাড়ি বলে জানা যায়। পুলিশ সলমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সে জানায় যে সে গত মার্চে দেবেন্দ্র নামে একজনের কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিল। পরে, এটি হাত বদল করে আমিরের কাছে চলে যায়। আমির এটি তারিকের কাছে হস্তান্তর করে। তারিকের কাছ থেকে, গাড়িটি ডা. উমরের কাছে চলে যায়। উমর শ্রীনগরের সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমডি সম্পন্ন করেন এবং জিএমসি অনন্তনাগে সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ডা. উমর নবি এবং ইমাম ইরফান আহমদ ওয়াগায় প্রথম পরিচিত হন এক গ্রুপের মাধ্যমে। শুরুতে তাদের আলাপচারিতা “কাশ্মীরের আজাদি” ও “কাশ্মীরিদের দমননীতি” নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে আলোচনার বিষয় ঘুরে যায় “গ্লোবাল জিহাদ” ও “প্রতিশোধ”-এর মতো বিস্তৃত আদর্শিক প্রভাবের দিকে।
ডা. উমর নবি, ডা. মুজাম্মিল ও ডা. শাহিন শাহিদ—এই তিনজন ছিলেন ৯ থেকে ১০ সদস্যের এক সন্ত্রাসী লজিস্টিক্স নেটওয়ার্কের অংশ, যার মধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ জনই চিকিৎসক। এই শিক্ষিত সদস্যরা নিজেদের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করে সন্দেহ এড়িয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ, বোমা তৈরির উপাদান জোগাড় এবং অভিযানের সমন্বয় করতেন।
তদন্তকারীদের মতে, চিকিৎসক হিসেবে তাদের সহজ চলাচল, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার, এবং যোগাযোগের নেটওয়ার্ককে তারা সন্ত্রাসী কাজের আড়াল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে নজর যোগাযোগের নেটওয়ার্কে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত তদন্তও জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন লালকেল্লা বিস্ফোরণ-সংক্রান্ত সমস্ত যোগাযোগ বিশ্লেষণ করছে। বিস্ফোরণের দিন বিকেল ৩টা থেকে ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কে বা কার সঙ্গে ডা. উমর যোগাযোগ করেছিলেন, তা জানতে ওই এলাকার মোবাইল টাওয়ার ডেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি ডা. উমর নিজেই চালাচ্ছিলেন এবং বিস্ফোরণের আগে তিনি একাধিকবার ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেসব কল রেকর্ড এখন ফরেনসিক বিশ্লেষণের আওতায় আনা হয়েছে।
