আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির লালকেল্লায় ঘটে যাওয়া গাড়ি-বোমায় ব্যবহার করা হয়েছিল ANFO অর্থাৎ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও জ্বালানি তেলের মিশ্রণ। একটি হন্ডাই হায়ুন্ডাই i20 গাড়িতে ভর্তি ছিল। বিস্ফোরকটি সম্ভবত ডিটোনেটর দিয়ে সেগুলোত করা হয়; তদন্তে উঠে এসেছে এটি ম্যানুয়ালি ট্রিগার করা হতে পারে, ফলে এটিকে আত্মঘাতী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।


জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তল্লাশিতে উদ্ধার হয় প্রায় ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এটি আল-ফালাহ হাসপাতালের চিকিৎসক ড. মুজাম্মিল শাকিলের দুইটি বাসভবন থেকে পাওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই নিয়োজিতদের সঙ্গে আরও কয়েকজন—ড. আডিল আহমেদ রঠিক, ড. শাহিনা শাহিদ—সহ একটি জইশ-এ-মহম্মদ সেল যুক্ত ছিল। তল্লাশিতে মোটামুটি ২,০০০ কেজি বা তার বেশি অন্যান্য বিস্ফোরক সাপ্লাইও ধরা পড়ে।


প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল উদ্ধার হওয়া পদার্থটি RDX। এটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক ক্লাসের একচেটিয়া বিস্ফোরক যা সরকারি ও গোয়েন্দা মহলে চিন্তা তৈরি করেছিল। যদিও পরে নিরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে এটি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এ দুটির মধ্যে মূল পার্থক্য কী?


RDX হল এক ধরণের একক, উচ্চ-ব্রিসান্স (high-brisance) বিস্ফোরক, অর্থাৎ এটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিস্ফোটিত হয় এবং ধাতু, কংক্রিট ইত্যাদি শক্ত কাঠামো সহজেই ভেঙে দিতে সক্ষম। সামরিক-মানের শক্তিশালী বিস্ফোরণ উপকরণ যেমন C-4 বা Semtex-এ RDX প্রায়শই মূল উপাদান। RDX-এর ডিটোনেশন ভেলোসিটি অত্যন্ত উচ্চ। রেকর্ড অনুযায়ী প্রায় ৮,৭০০ মিটার/সেকেন্ড—এবং TNT-র তুলনায় কার্যকারিতা ১.৫–১.৬ গুণ বেশি, অর্থাৎ TNT-র চেয়ে কমপক্ষে ৫০% শক্তিশালী। বিশ্বজুড়ে জঙ্গি হামলায় RDX তাই সঠিক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।


অন্যদিকে, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH₄NO₃) হচ্ছে একটি সাদা করালীয় ক্রিস্টাল জাতীয় খাদ্যসারের মতো উপাদান, যা মূলত সার হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। এটি নিজে থেকেই সাধারণভাবে বিস্ফোরক নয়। তবে শক্তিশালী অক্সিডাইজার হওয়ায় যদি যথাযোগ্য তেলের মতো জ্বালানি বা অন্য উড়ন্ত পদার্থের সঙ্গে মিশ্রিত করে এবং বাইরের শক্ত ডিটোনেশন দেওয়া হয়, তখন তা বড় আকারের বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ANFO-র আউটপুট ইউনিট প্রতি কেজিতে তুলনামূলকভাবে RDX-র চেয়ে কম, তাই এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মূলত ভলিউমে, অর্থাৎ বড় পরিমাণে ব্যবহার করলে মারাত্মক হয়। উদাহরণ হিসেবে ওকলাহোমা সিটিতেও ১৯৯৫ সালে বিশাল ANFO বিস্ফোরণ হয়েছে।


ভারতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ন্ত্রণাধীন পদার্থ; এর উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহার লাইসেন্স সাপেক্ষ এবং অনুমোদন ছাড়া বড় পরিমাণে ক্রয়-ধারণ করা বেআইনি। তাই অপরাধীরা কীভাবে এত বিশাল পরিমাণে এসব সংগ্রহ করল এটাই এখন তদন্তকারীদের অন্যতম বড় প্রশ্ন।


ট্রিগার মেকানিজম, উৎস, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লালকেল্লা বিস্ফোরণের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ও উদ্ধার হওয়া উপাদানের প্রকৃতির ব্যাপকতা সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য আসে সেটাই দেখার।