আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফরিদাবাদের ধৌজ গ্রামে অবস্থিত আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ও তার বিস্তীর্ণ ৭৬ একর ক্যাম্পাস এখন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার নজরে। সম্প্রতি দিল্লির লালকেল্লার কাছে ঘটে যাওয়া উচ্চমাত্রার বিস্ফোরণ ও “হোয়াইট-কলার টেরর মডিউল” মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়-সংযুক্ত তিন চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের পরই এই তদন্ত শুরু হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, পাকিস্তান-সমর্থিত হ্যান্ডলারদের নির্দেশে শিক্ষিত পেশাজীবীদের একটি অংশ সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। এর সূত্রেই উঠে এসেছে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম—যা কীভাবে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো, সেটিই এখন তদন্তের মূল ফোকাস।
আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় মূলত ১৯৯৭ সালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে ২০১৩ সালে জাতীয় মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি পরিষদ (NAAC) থেকে ‘A’ গ্রেড অর্জন করে এবং ২০১৪ সালে হরিয়ানা সরকার এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেয়। এটি ‘আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজ’-সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সংস্থা ‘আল-ফালাহ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’, যা ১৯৯৫ সালে গঠিত হয়। বর্তমানে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জওয়াদ আহমদ সিদ্দিকি, সহ-সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ কাসিমি এবং সচিব মহম্মদ ওয়াজিদ ডিএমই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার প্রফেসর (ড.) মোহাম্মদ পারভেজ এবং উপাচার্য পদে আছেন ড. ভূপিন্দর কৌর আনন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনটি প্রধান কলেজ রয়েছে—আল-ফালাহ স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ব্রাউন হিল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, এবং আল-ফালাহ স্কুল অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং। পাশাপাশি রয়েছে ৬৫০ বেডের একটি হাসপাতাল, যেখানে দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
মঙ্গলবার পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক তল্লাশি চালায় এবং বহু শিক্ষক, কর্মী ও শিক্ষার্থীর বয়ান নেয়। এই পদক্ষেপ আসে সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর, যাতে ১২ জন নিহত ও একাধিক ব্যক্তি আহত হন।
তদন্তে জানা গেছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হুন্ডাই i20 গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা ডা. মহম্মদ উমর নবি, যিনি আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে সোমবারই নিরাপত্তা বাহিনী আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়-সংযুক্ত তিন চিকিৎসক-সহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ২,৯০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক উদ্ধার হয়, যা ‘জইশ-ই-মহম্মদ’ ও ‘আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ’-এর সঙ্গে যুক্ত এক আন্তঃরাজ্য সন্ত্রাস মডিউলের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে অন্যতম ডা. মুজাম্মিল গণাই, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।
তদন্তকারীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক, শিক্ষকদের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক লেনদেন খতিয়ে দেখছেন। তারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, কীভাবে শিক্ষা ও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান এত বড় সন্ত্রাস চক্রের পরিকাঠামোয় পরিণত হলো।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ও পরিচালন কাঠামোতেও শীঘ্রই বড় পরিবর্তন আনা হতে পারে।
