আজকাল ওয়েবডেস্ক: নতুনদের এখনই না তুলে আনলে ক্রমেই  পার্টি পরিণত হবে বৃদ্ধাশ্রমে, আশঙ্কা প্রকাশ সিপিএম-এর পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনে। 

মাদুরাইতে চলছে সিপিএম-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। এপ্রিলের ২ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত চলবে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং মতাদর্শগত কাঁটাছেড়া। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে এর আগে সম্ভবত কোনও পার্টি কংগ্রসে অনুষ্ঠিত হয়নি সিপিএম-এর। 


জাতীয় রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার আগ্রাসণ রুখতে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে 'ইন্ডিয়া' মঞ্চ গঠনের উদ্যোগী হয়েছিলেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিতারাম ইয়েচুরি। ইয়েচুরির মৃত্যুর পরে কে হবেন আগামী সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা শঙ্কা ছিল পার্টির অভ্যন্তরে ও। এমনকি তাঁর স্মরণ সভাতেও দুশ্চিন্তার স্বর শোনা যায় ইন্ডিয়া মঞ্চের উপস্থিত নেতৃত্বের গলায়। সিতারামের মতো সর্বজনবিদীত, বাগ্মী এবং প্রাজ্ঞ ব্যক্তির 'বদলি' কে হবেন সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক রক্তক্ষরণে জর্জরিত সিপিএমে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চোখ রাখতে হবে চলতি পার্টি কংগ্রেসে। 


সিপিএম-এর এক সূত্রের খবর, বর্তমানে ৪ জনের নাম ভাসছে সিতারামের 'বদলি' হিসেবে- বৃন্দা কারাট, অশোক ধাওয়ালে, এম এ বেবি এবং মহম্মদ সেলিম। বাংলার পার্টি সূত্রে খবর সেলিমকে সম্পাদক হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি তা সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর আশু লক্ষ্য বাংলায় সিপিএম-কে 'অচলায়তন' ভেঙে 'নয়া বাম' হিসেবে গড়ে তোলা। সেলিমের পরেই যেই তিনজনের নাম ভাসছে তাঁদের মধ্যে এম এ বেবিকে নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। মূলত কেরল কেন্দ্রিক রাজনীতি করেন এবং জাতীয় রাজনীতির 'সাপ-লুডো' তিনি বোঝেন না বলেই আপত্তি তাঁকে নিয়ে। তারপরেই রয়েছে মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা অশোক ধাওয়ালের নাম। ধাওয়ালে জাতীয় রাজনীতিতে মোটামুটি সুপরিচিত নাম। দেশের কৃষক আন্দোলনের সামনের সারির নেতা তিনি। সব শেষে রয়েছে বৃন্দা কারাটের নাম। তাঁকে নিয়েও আপত্তি নেই দলের। তবে এইবারে  বয়সজনিত কারণে যারা যারা বাদ পড়তে পারেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বৃন্দা কারাট। সেক্ষেত্রে দলের কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাটকে পার্টির সংবিধান বদল করতে বিশেষ প্রস্তাব এনে তা পাশ করাবার জটিল অংকের ওপর নির্ভর করতে হবে। 


এদিকে, বাংলা থেকে এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো থেকে কিছু নাম বাদ পড়ার পাশাপাশি নতুন নামও যুক্ত হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর। বয়সজনিত কারণে পলিটিব্যুরো থেকে বাদ পড়তে পারেন সূর্য কান্ত মিশ্র। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন আভাস রায়চৌধুরী কিংবা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হতে পারে মীনাক্ষী মুখার্জিকে। মীনাক্ষীকে সভাপতিমণ্ডলীতে বসিয়ে এই নিয়ে পার্টি কংগ্রেস চলাকালীনই পরোক্ষে বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সিপিএমে সাধারণত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন এমন কাউকে সভা পরিচালনার কমিটিতে বসানো হয় না। তাহলে কি মীনাক্ষীময় হতে চলেছে বাংলার সিপিএম? জল্পনা পার্টির অন্দরমহলে।


কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢোকার অন্য আরেক মহিলা মুখ কনিনিকা ঘোষ বোস। যদিও নানা অংকে 'কাটা' পরে যেতে পারেন তিনি, এমনই মত সূত্রের।
এছাড়াও বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যেতে পারেন দেবাশিস চক্রবর্তী। দেবাশিস চক্রবর্তী সিপিএম-এর মুখপত্র গণশক্তির প্রাক্তন সম্পাদক। সিপিএম-এর অভ্যন্তরে মৃদুভাষী এবং বিদগ্ধ তাত্বিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত দেবাশিস চক্রবর্তী বর্তমানে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য এবং রাজারহাটে জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত। 

সিপিএম সূত্রে খবর, দলের বৃদ্ধতন্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রকাশ কারাটের পেশ করা খসড়া প্রতিবেদনে। পার্টিতে তরুণদের সংখ্যা বাড়াতে গণসংগঠনগুলোর সদর্থক ভূমিকা না থাকার বিষয়টিও সামনে এসছে প্রতিবেদনে। উঠে এসছে 'বাম ঐক্য'র দাবিও।
বৃহস্পতিবার বাংলা থেকে রিপোর্ট করবেন পলাশ দাস, দেবাশিস চক্রবর্তী, মোনালিসা সিনহা, সমন পাঠক, দেবু রায়, জাহানারা খান এবং সৈয়দ হোসেন প্রমুখ নেতারা।