আবু হায়াত বিশ্বাস, আমেদাবাদ: শেষবার কংগ্রেস গুজরাটে ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৯৫ সালে। তার পর প্রায় তিন দশক ক্ষমতার বাইরে। সময়ের ব্যবধানে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে হাত শিবির। রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়ে 'দিশেহারা' শতাব্দী প্রাচীন দলটি। এমন পরিস্থিতিতে দলের সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী হয়ে লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা হাত শিবিরের। তাই মোদি-‌শাহের গুজরাটেই ছয় দশক পর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত অধিবেশন বসছে মঙ্গলবার, চলবে দু'দিন। 

বুধবার এআইসিসি-‌র অধিবেশন বসছে সবরমতীর পারে। ছয় দশক পরে গুজরাটে এই অধিবেশন ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে কংগ্রেস নেতা-‌কর্মীদের। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াইয়ে আগামী দিনে দলের রণনীতি কী হবে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে অধিবেশনে। রাজ্যে রাজ্যে শরিক দলগুলির সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দলের রণকৌশল কী হ‌ওয়া উচিত, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা।

কংগ্রেসের অধিবেশনকে কেন্দ্র করে আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গোটা শহরে পড়েছে ফ্লেক্স, পোস্টার, বড় বড় কাট আউট। সেখানে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের ছবি। মাথায় টুপি, হাতে পতাকা, গলায় উত্তরীয় নিয়ে শহরের এদিক ওদিক ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবকরা। গোটা আমেদাবাদ শহরে কংগ্রেসের পতাকায় ছয়লাপ। দেখে মনে হয় না, এই রাজ্যে গত ৩০ বছরে ক্ষমতায় নেই কংগ্রেস। এমনকি ২০২২ সালে শেষ নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১৭ আসন পেয়েছিল। এবার সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে হাত শিবির। 

২০২৭ সালে গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে গুজরাটে এআইসিসি অধিবেশন আয়োজন করে দলের নেতা-‌কর্মীদের চাঙ্গা করতে চাইছে কংগ্রেস। গত মাসেই রাহুল গান্ধী গুজরাটে এসে ব্লক, জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। রাজ্যে উচ্চবর্ণের ভোটাররা কেন কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে? কীভাবে তাদের সমর্থন আদায় করা যায়? তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল বৈঠকে। আগামী দিনে দলের রণকৌশল কী হবে? তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে চলেছে আমেদাবাদে। কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল বলেন, "৬০ বছর পর গুজরাটে কংগ্রেসের অধিবেশন হতে চলেছে। দু'দিনের অধিবেশনে অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। এই অধিবেশন দেশ ও দলের সংগঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।"‌ 

চলতি বছরে বিহারে বিধানসভা ভোট রয়েছে। আগামী বছর অসম ও বাংলা, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে যেমন নজর দিচ্ছে দল, তেমনই ২০২৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য হাত শিবিরের। সূত্রের খবর, আমেদাবাদের অধিবেশন থেকে দল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। অধিবেশনের ট্যাগ লাইন ‘‌ন্যায়পথ: সংকল্প, সমর্পণ, সংঘর্ষ’‌। 

দলের নেতারা বলছেন, দেশের সংবিধান রক্ষার জন্য, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পথে থাকবে কংগ্রেস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বে  এবং দেশকে নতুন দিশা দেখাবে কংগ্রেস। দলের একাংশের বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে লড়াই করতে হলে তাদের চোখে চোখ রেখে চলা ছাড়া গতি নেই। এই কারণেই গুজরাটকে বেছে নেওয়া। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল মেমোরিয়ালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে ৮ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল কংগ্রেসের অধিবেশন। যে অধিবেশনে দলের হাজার কর্মী ও পদাধিকারী শামিল হবেন। 

অধিবেশনে বাংলার ৮৭ নেতার উপস্থিত থাকার কথা। সোমবার রাতেই আমেদাবাদে এআইসিসি ও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা পৌঁছেছেন। নেতারা এসে গিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে মহাত্মা গান্ধীর শততম বার্ষিকীতে আমেদেবাদে অধিবেশনের জন্য বেছে নিয়েছে কংগ্রেস। দলের বক্তব্য, বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

কংগ্রেস আগেই জানিয়েছে, ২০২৫ সাল সংগঠনের বছর। দলের খোল নলচে বদলানোর উপর জোর দিচ্ছে দল। সেই লক্ষ্যে রাজ্যে রাজ্যে রদবদল হচ্ছে। দিন কয়েক আগেই দেশের সমস্ত রাজ্যের জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জেলা সভাপতিদের আরও ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবছে দল। এছাড়াও রাজ্যে রাজ্যে দূর্বল সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নজর দেওয়া হচ্ছে।