‌আবু হায়াত বিশ্বাস: ‘‌মনরেগা বাঁচাও’‌ অভিযানে নামছে কংগ্রেস। আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে আন্দোলন। পঞ্চায়েত, ব্লক এবং জেলায় জেলায় এই আন্দোলন তীব্র করতে চলেছে দেশের প্রধান বিরোধী দল। শনিবার দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদের শীত অধিবেশনে মোদি সরকারের আনা ‘‌ভিবি জি রামজি’‌ বিল নিয়ে বিরোধী শিবির বিরোধীতা করেছিল। তা সত্ত্বেও সংখ্যার বলে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। যে বিল ইতিমধ্যেই আইনে পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করার  পরে। 

এদিন দুপুরে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সিডব্লুসি বৈঠক বসেছিল। সেই বৈঠকে মোদি সরকারকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতারা। মনরেগা বাঁচানোর শপথ নেন কমিটির সদস্যরা। কেন্দ্র সরকারের সিদ্ধান্তে মনরেগার-এর নাম ও কাঠামো পরিবর্তনের তীব্র নিন্দা করেছে কংগ্রেস। বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, মন্ত্রিসভার সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই মনরেগার নাম বদলে নতুন বিল পাশ করানো হয়েছে, যা স্পষ্টতই ‘ওয়ান ম্যান শো’-এর উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

রাহুলের বক্তব্য,মনরেগা শুধু একটি প্রকল্প নয়, এটি একটি অধিকারভিত্তিক কর্মসূচি। বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত মনরেগা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ ন্যূনতম মজুরি ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেতেন। এখন এই অধিকারভিত্তিক ধারণার উপর সরাসরি আঘাত করা হয়েছে। রাজ্যের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামীণ অর্থনীতি এবং সবচেয়ে বেশি ভুগবে গরিব মানুষ। 

রাহুলের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সরাসরি নেওয়া হয়েছে, কোনও মন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ না করেই। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘‌কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আমরা সর্বসম্মতভাবে কেন্দ্র সরকারের সেই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছি, যার মাধ্যমে মনরেগার নাম ও কাঠামো বদলে কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্পের মূল আত্মাকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে।’‌

এদিন খাড়গে মোদি সরকারকে স্মরণ করিয়েছেন, দেশে ৩ কৃষি আইন এনেছিল মোদি সরকার এবং কৃষকদের আন্দোলনের কাছে মাথনত করেছিল, তেমনই মনরেগাকে ফেরানোর জন্য গণ আন্দোলন তৈরি হবে। 

কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন,এর আগে মনরেগা মজুরির ৯০% কেন্দ্রীয় সরকার এবং ১০% রাজ্য সরকার প্রদান করত। এখন, এটি ৬০:৪০ অনুপাতে ভাগ করা হয়েছে। এর ফলে রাজ্য সরকারগুলির উপর আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে তাদের রাজ্যগুলিতে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হবে। খাড়গে দাবি করেছেন,‘‌মনরেগা নাম বদলের সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে। মোদি সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও পরামর্শ করেনি। নতুন আইন কেবল দরিদ্রদের পিষে ফেলা এবং নিপীড়ন করার জন্য আনা হয়েছে। আমরা এর বিরোধিতা করব এবং লড়াই চালিয়ে যাব।’‌ 

আগামী বছরের একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও কৌশল নির্ধারণে শনিবার দিল্লিতে বৈঠক হয়। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে মনরেগা বাতিল ও নতুন জিরামজি আইনের বিরোধিতা ছিল অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন সামনে রেখে রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। এসআইআর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন খাড়গে। তাঁর বক্তব্য, এসআইআর একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা। বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার নিন্দা করেন খাড়গে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ও আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সংগঠনগুলোর দ্বারা বড়দিনের অনুষ্ঠানে হামলা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

‌‌এদিনের সিডব্লুসি বৈঠকে বাংলার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বলেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলার পরিযায়ীদের। বাংলাভাষী ও বাংলাদেশীদের মধ্যে পার্থক্য না বুঝে অত্যাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা এক যুবক বিজেপি শাসিত রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে। বিজেপির শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরণের হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। এই ইস্যুটি নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা বলেছেন। এছাড়াও মনরেগা বাঁচাও অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে জনসভা করা হবে। অধীর শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, মনরেগা নিয়ে বাংলায় একটি জনসভা করার জন্য।