আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের তামাক শিল্প আবারও আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে কেন্দ্র সরকারের নতুন কর সংস্কারের প্রস্তাব ঘিরে। সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের ওপর চালু থাকা বর্তমান জিএসটি ক্ষতিপূরণ সেস তুলে দিয়ে তার বদলে স্বাস্থ্য ও জাতীয় নিরাপত্তা সেস আরোপের পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে বিভিন্ন তামাক পণ্যের ওপর আবগারি শুল্কও (excise duty) বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষতিপূরণ সেসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তামাক কর কাঠামোকে সহজ করার লক্ষ্যেই এই সংস্কার। তবে আইনীভাবে উৎপাদিত সিগারেট নির্মাতাদের জন্য মোট করের বোঝা কিছুটা বাড়তেই পারে।


সরকারের নতুন বিলের উদ্দেশ্য হল জিএসটি ক্ষতিপূরণ সেস উঠে যাওয়ার পর যে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে তা বাড়তি আবগারি শুল্কের মাধ্যমে পূরণ করা। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য রাজস্ব নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কর ব্যবস্থাকে নতুন যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। সিগারেটের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এর প্রভাব ভিন্ন হবে, তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটেগরিতে মাঝারি মাত্রার কর বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।


বর্তমানে সিগারেটের ওপর ৫ শতাংশ অ্যাড-ভ্যালোরেম ক্ষতিপূরণ সেস আরোপিত হয়, সঙ্গে রয়েছে প্রতি ১,০০০ স্টিকে ২,০৭৬ থেকে ৩,৬৬৮ টাকা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সেস। সেস উঠে গেলে তামাকজাত পণ্যগুলোর ওপর ৪০ শতাংশ জিএসটি এবং সংশোধিত আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হবে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, পূর্বের ২০০–৭৩৫ টাকা প্রতি ১,০০০ স্টিকের আবগারি শুল্ককে প্রতিস্থাপিত করে ২,৭০০–১১,০০০ টাকার একটি নতুন স্ল্যাব আনা হয়েছে, যা স্টিকের আকার ও স্পেসিফিকেশনের ওপর নির্ভর করবে। জিএসটি মিলিয়ে মোট করভার আইনী সিগারেট নির্মাতাদের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।


প্রস্তাবিত বিলে চিবোনো তামাকের ওপর আবগারি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। হুক্কা বা গুড়াকু তামাকের শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ, আর পাইপ বা সিগারেটের জন্য ব্যবহৃত স্মোকিং মিশ্রণের শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৩২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই পরিবর্তন বৃহত্তর GST 2.0 রূপান্তরেরই অংশ, যেখানে তামাক খাতকে সাময়িকভাবে বাইরে রাখা হয়েছিল কোভিড–কালীন ঋণ পরিশোধের কারণে। এখন সেই ঋণ প্রায় শেষ হওয়ায় নতুন করহার চালুর অনুমতি দিয়েছে জিএসটি কাউন্সিল।


উৎপাদকেরা অধিকাংশ বাড়তি কর গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে, বিশেষত প্রিমিয়াম ও কিং-সাইজ সিগারেটে যেখানে মূল্য সংবেদনশীলতা তুলনামূলকভাবে কম। দাসানির মতে, ব্র্যান্ড অনুযায়ী উচ্চ এক অঙ্ক থেকে নিম্ন দুই অঙ্ক পর্যন্ত দামের বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।


আইটিসি, ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং গডফ্রে ফিলিপসের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রভাবটি কাঠামোগত নয় বরং স্বল্পমেয়াদি হতে পারে। বাড়তি দাম সাময়িকভাবে বিক্রি কমাতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে, তবে স্পষ্ট কর-দিশা দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা সহজ করবে। কোম্পানিগুলো যদি ধাপে ধাপে দাম বাড়ায় এবং পণ্যের মিশ্রণ সঠিকভাবে সামলায়, তাহলে মার্জিন ও রিটার্ন অনুপাত আগামী কয়েক ত্রৈমাসিকে স্থিতিশীল হতে পারে।


তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ লাভই আসে সিগারেট থেকে। অন্যদিকে, আইটিসি ও গডফ্রে ফিলিপসের বড় FMCG ও বৈচিত্র্যময় তামাক পোর্টফোলিও তাদের কিছুটা সুরক্ষা দিচ্ছে।


২০২৫ সালে তামাক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পারফরম্যান্স বেশ অসমান ছিল। গডফ্রে ফিলিপসের শেয়ার প্রিমিয়াম সিগারেট, ক্যাপসুল ভ্যারিয়েন্ট, চিবোনো পণ্য ও রপ্তানির জোরালো বৃদ্ধির কারণে ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে আইটিসি ১৬ শতাংশ ও ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ ২৫ শতাংশ নিচে নেমেছে। আসন্ন কর পরিবর্তনগুলো স্বল্পমেয়াদে অস্থিরতা বাড়াতে পারে, তবে বিশ্লেষকদের মতে, এখন অন্তত নীতিগত দিক–নির্দেশনা আরও স্পষ্ট হয়েছে।