আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল জায়গার নাম উঠলেই অবধারিতভাবে মেঘালয়ের মৌসিনরাম বা চেরাপুঞ্জির কথা মনে আসে। কিন্তু সেই তালিকার এক অন্যতম দাবিদার যে মহারাষ্ট্রের কোলেই লুকিয়ে রয়েছে, সে খবর ক'জন রাখেন? নাম তার তামহিনী ঘাট। আশ্চর্যের বিষয় হল, মুম্বইয়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও এখানকার রাস্তাঘাট আশ্চর্যরকম মসৃণ ও গর্তহীন। বর্ষার রুদ্র রূপ এবং মানুষের তৈরি পথের এই সহাবস্থানই এখন পর্যটক থেকে প্রকৃতিপ্রেমী, সকলের কাছে এক অপার বিস্ময়।

বর্ষা নামতেই যেন এক জাদুবলে বদলে যায় এই অঞ্চলের রূপ। চারপাশের সহ্যাদ্রি পর্বতমালা ঢেকে যায় গাঢ় সবুজ চাদরে। পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসে অজস্র ছোট-বড় ঝর্না, যা পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। মেঘ এবং কুয়াশার চাদরে মোড়া এই পথের প্রতিটি বাঁক যেন এক নতুন দৃশ্যপটের জন্ম দেয়। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির এই আদিম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পুণে এবং মুম্বইয়ের মতো শহর থেকে সপ্তাহান্তে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। ট্রেকিং এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে তামহিনী ঘাট এক স্বর্গোদ্যান।

মহারাষ্ট্রের মুলশি এবং তামহিনী গ্রামের মধ্যে অবস্থিত এই মনোরম গিরিপথটি এখন রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পুণে থেকে এর দূরত্ব খুব বেশি নয়। পাউড রোড ধরে মুলশি বাঁধের দিকে গেলেই তামহিনী ঘাটের রাস্তা পাওয়া যায়। সড়কপথে গাড়িতে যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে, মুম্বই থেকে আসতে হলে মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে খোপোলি এক্সিট দিয়ে পালি হয়ে এই ঘাটে পৌঁছনো যায়। সেক্ষেত্রে সময় লাগে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

আরও পড়ুনঃ গর্ভপাতের পরেও 'ওটা' চাই, নয়তো চাকরি খেয়ে নেব! মহিলা কর্মীর প্রতি ক্রীতদাসী সুলভ আচরণে রাগে ফুঁসছে নেটপাড়া...

কিন্তু আসল প্রশ্নটি হল, যেখানে প্রবল বর্ষায় দেশের বড় বড় শহরের রাস্তাও বেহাল হয়ে যায়, সেখানে তামহিনী ঘাটের রাস্তা কীভাবে এমন মসৃণ থাকে? এই প্রশ্নের কোনও নিশ্চিত উত্তর না মিললেও বিশেষজ্ঞরা এর নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন। প্রথমত, তামহিনীর পার্বত্য ভৌগোলিক গঠন। পাহাড়ি ঢালের কারণে বৃষ্টির জল রাস্তায় এক মুহূর্তও জমে থাকতে পারে না, দ্রুত গড়িয়ে নেমে যায়। জল জমে রাস্তা খারাপ হওয়ার মূলগত আশঙ্কাটাই এখানে নেই।

দ্বিতীয়ত, উন্নত নির্মাণশৈলী এবং ব্যবহৃত সামগ্রীর গুণমান। মনে করা হয়, এই রাস্তা তৈরির সময় জলনিকাশি ব্যবস্থার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল, যা একে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এর পাশাপাশি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও এই মসৃণ রাস্তার স্বাস্থ্যরক্ষার অন্যতম চাবিকাঠি। প্রশাসন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিরন্তর নজরদারির ফলেই চরম বর্ষাতেও টিকে রয়েছে এই রাস্তা।

সব মিলিয়ে, তামহিনী ঘাট শুধু বর্ষায় বেড়ানোর একটি আদর্শ জায়গা নয়, এটি প্রকৃতির রুদ্র রূপের সঙ্গে উন্নত ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সঠিক পরিকল্পনার এক অপূর্ব মেলবন্ধনের নিদর্শনও বটে। যেখানে প্রকৃতি তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে, সেখানেই মানুষের তৈরি পথও টিকে রয়েছে স্বমহিমায়, যা নিঃসন্দেহে এক শিক্ষণীয় বিষয়।