আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সহপাঠিনীকে কলেজের পুরুষদের শৌচাগারে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের নাম জীবন গৌড়া (২১)। তিনি ওই কলেজের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র। বুধবার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত ১০ অক্টোবর। অভিযুক্ত ও নির্যাতিতা দু’জনেই একই কলেজের ছাত্রছাত্রী। নির্যাতিতা সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী, আর জীবন গৌড়া এক বছর পিছিয়ে পড়ায় বর্তমানে ষষ্ঠ সেমিস্টারে পড়ছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার দিন নির্যাতিতা অভিযুক্তের কাছ থেকে কিছু ব্যক্তিগত জিনিস সংগ্রহ করতে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, দুপুরের খাবারের বিরতির সময় জীবন গৌড়া তাঁকে একাধিকবার ফোন করে সপ্তম তলার আর্কিটেকচার ব্লকের কাছে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে নির্যাতিতা অভিযুক্তের মুখোমুখি হলে, সে জোর করে তাঁকে চুম্বন করার চেষ্টা করে। নির্যাতিতা সেখান থেকে লিফটে নামার চেষ্টা করলে, জীবন গৌড়া পিছন থেকে তাঁকে অনুসরণ করে ষষ্ঠ তলায় নিয়ে যায় এবং জোর করে পুরুষদের টয়লেটের ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, জীবন গৌড়া টয়লেটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয় এবং নির্যাতিতার মোবাইল ফোন বাজতে শুরু করলে সেটি কেড়ে নেয়। ওই নৃশংস ঘটনা প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে, দুপুর ১টা ৩০ থেকে ১টা ৫০-র মধ্যে। ঘটনার পর নির্যাতিতা চরম মানসিক আঘাত পান এবং প্রথমে কাউকে কিছু জানাননি। পরে তিনি নিজের দুই বন্ধুর সঙ্গে ঘটনার কথা ভাগ করে নেন।
পরে অভিযুক্ত তাঁকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, “তোমার কি পিল দরকার?” — যা আরও মানসিকভাবে ভেঙে দেয় নির্যাতিতাকে। অবশেষে ১৫ অক্টোবর নির্যাতিতা তাঁর বাবা-মাকে বিষয়টি জানান, এবং তাঁরা মিলে হনুমন্থনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে ক্রাইম সিন পুনর্গঠনও করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল অর্থাৎ ষষ্ঠ তলায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, যা প্রমাণ সংগ্রহে বাধা তৈরি করছে। তবুও ফরেনসিক ও ডিজিটাল প্রমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কর্ণাটকের বিরোধী দল বিজেপি রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে। বিজেপি নেতা ও কর্ণাটক বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আর অশোক এক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে লিখেছেন, “কর্ণাটকে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মাত্র চার মাসে ৯৭৯টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র বেঙ্গালুরুতেই ১১৪টির বেশি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। মহিলারা ও শিশুরা ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের উদাসীনতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।”
তিনি আরও জানান, জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW)-এর কাছে জরুরি চিঠি পাঠিয়ে কর্ণাটকে একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। আর অশোক বলেন, “বিজেপি চুপ করে থাকবে না, যখন আমাদের বোনেরা ও কন্যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সরকারকে এই প্রশাসনিক ভাঙনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, জীবন গৌড়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita)-র ধারা ৬৪ অনুযায়ী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কলেজ প্রশাসনও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং অনেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নজরদারি ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করছেন।
