আজকাল ওয়েবডেস্ক: অমরনাথ যাত্রা স্থগিত। বালতাল রুটে অতিবৃষ্টির কারণে বিখ্যাত অমরনাথ যাত্রা এই মুহূর্তে ওই রুট দিয়ে স্থগিত রাখা হয়েছে বলে খবর। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এমন সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি এই অঞ্চলে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে যাত্রাপথে বেশ কিছু অংশে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ ১ ও ২ অগাস্ট বালতাল রুট দিয়ে যাত্রা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাব শুধু বালতাল রুটেই নয়, পহেলগাম রুটেও পড়েছে। উভয় রুটেই ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জেরেই বর্তমানে দু’টি পথেই রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ চলছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাস্তাগুলি পুনরায় যাত্রার উপযোগী ও নিরাপদ হয়ে উঠলে তবেই আবার যাত্রা শুরু হবে।
যদিও পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৩ অগাস্ট বালতাল রুট দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার বিজয় কুমার বিডুরি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'সম্প্রতি ভারি বৃষ্টির কারণে বালতাল রুটে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ৩ অগাস্টেও এই পথে যাত্রা চালু করা যাবে না।' তিনি আরও জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হলে তবেই এর ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী আপডেট দেওয়া হবে।
বৃষ্টি ও রুট স্থগিত থাকা সত্ত্বেও এবারের বাৎসরিক অমরনাথ যাত্রায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভক্ত অংশ নিয়েছেন। খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ৪.০৫ লক্ষেরও বেশি ভক্ত শ্রী অমরনাথের পবিত্র গুহায় পৌঁছেছেন। এটি চলতি মরসুমে একটি বড় সাফল্য বলে ধরা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তাঁরা যাত্রার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও প্রশাসনের নির্দেশনার প্রতি নজর রাখেন। এরই সঙ্গে প্রয়োজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। যাত্রীদের নিরাপত্তাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
প্রসঙ্গত সোমবার জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে খবর। পাশপাশি হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
খবর অনুযায়ী, রাজ্যের বারোটি জেলার মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে সাতটিতে ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য 'হলুদ' সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত শুক্রবার পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। 
 
 প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রায় ২০৮টি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৭টি মান্ডিতেই। বর্তমানে যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একাধিক রাস্তা। রাজ্য জরুরি অপারেশন সেন্টার (SEOC) অনুসারে, ৭৪৫টি জল সরবরাহ প্রকল্প এবং আরও ১৩৯টি বিদ্যুৎ বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে, ২০ জুন থেকে ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে, মোট ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৫৭ জন বৃষ্টিপাতজনিত ঘটনায় এবং ৪১ জন সড়ক দুর্ঘটনায়। আরও ১৭৮ জন আহত হয়েছেন। বর্ষায় ৩৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৩১টি আকস্মিক বন্যা, ২২টি ক্লাউডবার্স্ট এবং ১৮টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সিরমৌর জেলার রাজগড়ে ৭২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাদ্রালা (৪২.৪ মিমি), পাছাদ (৩৮ মিমি), মান্ডি (২৬.৪ মিমি), ভুন্টার (২২ মিমি), শিলারু (১৪.২ মিমি), সেওবাগ (১২.২ মিমি), শিমলা (১১.৫ মিমি) এবং রোহরু (১০ মিমি)।
৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
