আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুর ভয়াবহ যানজট সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে লেখা এক হাতে-লেখা চিঠি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আলোচ্য বিষয় হল, চিঠিটি লিখেছে মাত্র পাঁচ বছরের এক নাবালিকা শিশু। রবিবার নাম্মা মেট্রোর ইয়েলো লাইন উদ্বোধনে ‘গার্ডেন সিটি’ বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই সুযোগেই সাহায্যের আবেদন জানায় ছোট্ট মেয়েটি। শিশুটির বাবা, বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা অভিরূপ চট্টোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে চিঠিটি শেয়ার করে লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেঙ্গালুরুতে এসেছেন। আমার ৫ বছরের মেয়ে মনে করছে, এটাই ট্রাফিক সমস্যার সমাধানের সেরা সুযোগ’। সংক্ষিপ্ত কিন্তু সরাসরি ভাষায় লেখা সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে শহরের বড় সমস্যাগুলোর কথা। চিঠিতে ওই নাবালিকা লিখেছে, ‘নরেন্দ্র মোদি জি, এখানে ট্রাফিকের খুব সমস্যা। আমরা স্কুল ও অফিসে দেরি করে পৌঁছাই। রাস্তা খুব খারাপ। দয়া করে সাহায্য করুন’। এই পোস্ট ভাইরাল হয়ে ইতিমধ্যেই ৫.৫ লক্ষাধিক ভিউ পেয়েছে।
নেটিজেনরাও ছোট্ট মেয়েটির পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হয়েছেন। একজন কমেন্ট করে লিখেছেন, ‘আশা করি মোদি আপনার মেয়ের সঙ্গে দেখা করবেন এবং মেয়েটির ইচ্ছে পূরণ হবে’। আরেকজন লিখেছেন, ‘আশা ভালো জিনিস। কিন্তু সুশাসনের আশা করা মানে হাতে বালি ধরা। ধন্যবাদ বিজেপি ও কংগ্রেসকে’। আর এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর বক্তব্য, ‘চিঠিটি সুন্দর ও শক্তিশালী বার্তা বহন করছে। প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, অনুরোধ করছি সাহায্য করুন’। দেশের অন্যতম আইটি হাব বেঙ্গালুরু দীর্ঘদিনের সমস্যার সম্মুখীন, অসহনীয় যানজট। এই পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে সম্প্রতি এগিয়ে এসেছেন ইজি মাই ট্রিপের সহ প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত পিট্টি। তিনি জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং গুগল ম্যাপসের ডেটার সাহায্যে শহরের যানজট কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেবেন।
PM is visiting Bangalore. My 5-year-old girl sees it as her chance to finally fix traffic. pic.twitter.com/EJdzpxSs89
— Abhiroop Chatterjee (@AbhiroopChat)Tweet by @AbhiroopChat
এমনকি, এই গোটা প্রকল্পের জন্য ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতেও তিনি প্রস্তুত। প্রশান্ত পিট্টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডেলে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, গত সপ্তাহান্তে মাত্র ১১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তাঁর দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে গিয়েছিল। ওই সময় তিনি বেঙ্গালুরুর আউটার রিং রোডে একটি চোক-পয়েন্টে দীর্ঘ সময় আটকে পড়েন। এক্স হ্যান্ডেলে লেখা পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি আউটার রিং রোডের একটি চোক-পয়েন্টে ১০০ মিনিট আটকে ছিলাম। সেখানে না ছিল কোনও ট্র্যাফিক লাইট, না কোনও পুলিশ। আমি শুধু অভিযোগ করতে চাই না। বরং এই সমস্যার সমাধান করতে চাই’। তিনি আরও লেখেন, ‘এই প্রকল্পে আমি ১ কোটি টাকা খরচ করতে ইচ্ছুক। এতে ১-২ জন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হবে।
গুগল ম্যাপ, কল, স্যাটেলাইট ইমেজারি এবং জিপিইউ ব্যবহারের জন্যও বাজেট থাকবে’। এই ঘোষণার পর বহু নেটিজেন প্রশংসা করেছেন এবং অনেকেই নিজেদের অবদান রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরপরেই প্রশান্ত একটি গুগল ফর্ম শেয়ার করেন, যাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নিজেদের দক্ষতা ও প্রস্তাবনা জানাতে পারেন। বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যা বর্তমানে ১.৩ কোটির বেশি। পাশাপাশি, প্রচুর পরিমাণে আইটি সেক্টর থাকার কারণে বাইরের রাজ্য থেকেও প্রচুর মানুষ বেঙ্গালুরুতে থাকেন। অন্যতম আইটি হাব হওয়ার কারণে প্রতিদিন রাস্তায় নামে লক্ষ লক্ষ গাড়ি। সংকীর্ণ রাস্তা, অপর্যাপ্ত গণপরিবহণ এবং চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সব মিলিয়ে দৈনন্দিন যাতায়াত এক বিভীষিকা হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।
যদিও মেট্রো সম্প্রসারণ, ট্রাফিক অ্যাপ, ও নানা ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি চালু হয়েছে, কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং অতিরিক্ত গাড়ির চাপে কোনও ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হচ্ছে না। ফলে, বেঙ্গালুরুর ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগের ঢল। প্রযুক্তি কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, বহু মানুষ জানাচ্ছেন, ট্র্যাফিকের কারণে জীবনের গতি থমকে যাচ্ছে। অফিস যাওয়া, স্কুলে পৌঁছানো, এমনকি হাসপাতালে পৌঁছানোও হয়ে উঠছে এক চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন বেঙ্গালুরু ছেড়ে অন্য শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন অনেকেই। আর এই প্রবণতা যদি বাড়ে, তবে দেশের অন্যতম বড় আইটি হাবের ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।
