আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাবার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। তার জন্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। এক মাসেই বদলে গেল তার জীবন! এই এক মাসের মধ্যেই অপহরণ, পাচারের চেষ্টা, জোর করে বিয়ে এবং সবশেষে ধর্ষণের শিকার হয় ১৩ বছরের কিশোরী। এক মাস পর কিশোরীকে উদ্ধার করল পুলিশ। তার মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনেই আঁতকে উঠেছে পুলিশ ও পরিবার।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কিশোরী আদতে দিল্লির বাসিন্দা। সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, এক মাস আগে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে দিল্লির ভরত নগর এলাকার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল কিশোরী। সেদিনই তাকে অপহরণ করে উত্তরপ্রদেশে পাচার করে দেওয়া হয়। সেখানেই জোর করে কিশোরীকে বিয়ে করে, ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতেরা হল, রাজীব (৪০) শামলির বাসিন্দা, বিকাশ (২০) হাপুরের বাসিন্দা, আশু (৫৫) মিরাটের বাসিন্দা এবং রামানজোট সিং (২৪) গাজিয়াবাদের বাসিন্দা। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, গত ২১ জুলাই দিল্লি থেকে নিখোঁজ ছিল ১৩ বছরের ওই কিশোরী। তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের শামলি থেকে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাগের মাথায় সেদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল কিশোরী। কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, গত ২১ জুলাই বাবার সঙ্গে ঝামেলার পর সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। এরপর মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে যায়। ইন্দরলোক মেট্রো স্টেশন থেকে নিউ দিল্লি রেল স্টেশনে চলে যায়। এরপর একটি ট্রেনে উঠে উত্তরপ্রদেশের মিরাটে পৌঁছে যায়। সেখানে পৌঁছে বিকাশের সঙ্গে দেখা হয় তার।
আরও পড়ুন: জল থইথই মুম্বই, প্রবল বৃষ্টিতে মৃত ১২, শ'য়ে শ'য়ে বিমান চলাচল ব্যাহত, আরও ভোগান্তি বাড়বে!
পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সেখানেই বিকাশ কিশোরীকে টোপ দিয়ে আশুর সঙ্গে দেখা করায়। দুজনে মিলে কিশোরীকে রাজীবের হাতে তুলে দেয়। তখনই রাজীব কিশোরীকে টাকা দিয়ে কিনে নেয়। কিশোরীর নামে একটি ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়েছিল রামানজোট। সেখানের কিশোরীর পরিচয় লুকিয়ে, তাকে তরুণী হিসেবে লেখা ছিল।
গত ২৪ জুলাই রাজীব জোর করে কিশোরীকে বিয়ে করে। শামিলতেই লাগাতর কিশোরীকে ধর্ষণ করে সে। এর মাঝেই কিশোরীর পরিবারের কাছে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ভুলবশত ফোন চলে গেছে। সেই নম্বরটি পুলিশের কাছে দেয় পরিবার। সেই নম্বরের লোকেশন ট্র্যাক করে জানা যায়, সেটি শামলির নম্বর। এরপরই স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে গত ১৬ আগস্ট রাজীবের বাড়ি থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে তারা।
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, রামানজোট গাজিয়াবাদে একটি সাইবার ক্যাফে চালায়। সেখান থেকে কিশোরীর ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করেছিল। গোটা ঘটনায় যে চারটি ফোনের মাধ্যমে অভিযুক্তরা যোগাযোগ করত, তাও হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৪৩ ধারা, ১৪৪ ধারা, ৬৪ ধারা, ৩৩৭ ধারা, ৩৩৯ ধারা, ৬১ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা জানিয়েছে, টাকার জন্য কিশোরীকে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কাউন্সেলিংয়ের পর কিশোরীকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে। পাচারের সঙ্গে আর কে কে জড়িত ছিল, অতীতের রেকর্ড খতিয়ে দেখছে দিল্লি পুলিশ।
