কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মূত্র থেকে শুরু করে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ সহ একাধিক জরুরি কাজ একা হাতে সামলায় এই অঙ্গ। তাই সুস্থ থাকতে বৃক্কের হাল ঠিক রাখা জরুরি। মানুষের শরীরে কিডনির সংখ্যা দু’টি, তাই একটি বিকল হলেও কাজ চলতে পারে অন্যটি দিয়ে। ফলে অন্যান্য অঙ্গের মতো প্রথমেই কিডনির ক্ষতির আঁচ বাইরে থেকে পাওয়া যায় না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিডনির সমস্যায় চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায়। কিডনি যদি ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন শরীর নানা সংকেত দিতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের প্রস্রাব কিডনির অবস্থার পরিষ্কার ছবি দিতে পারে। তাই প্রস্রাবের রং, গন্ধ বা পরিমাণ-এই ছোট পরিবর্তনগুলোতেও লুকিয়ে থাকতে পারে বড় স্বাস্থ্য সংকেত।
রঙের পরিবর্তনেই মিলতে পারে প্রথম ইঙ্গিতঃ স্বাভাবিক প্রস্রাব সাধারণত হালকা হলুদ রঙের হয়। কিন্তু হঠাৎ যদি রং খুব গাঢ় হয়ে যায়, বা বাদামি, লালচে কিংবা অস্বাভাবিক রং দেখা যায়, তাহলে তা কিডনির স্ট্রেস, জলশূন্যতা বা ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাবে রক্তক্ষরণও এভাবে ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূত্রেরর রঙের অস্বাভাবিকতা অবহেলা করলে পরে তা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের দিকে এগোতে পারে।
গন্ধ ও ঘনত্বও গুরুত্বপূর্ণ সংকেতঃ শুধু রং নয়, প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন হলেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তীব্র গন্ধ, পচা বা অস্বাভাবিক রাসায়নিক গন্ধ কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। একইভাবে, প্রস্রাব খুব বেশি ঘন হয়ে গেলে তা জলশূন্যতার পাশাপাশি কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়।
প্রস্রাবের পরিমাণ এবং কতক্ষণ বাদে বাদে হচ্ছেঃ প্রতিদিনের প্রস্রাবের পরিমাণও কিডনির স্বাস্থ্যের অন্যতম নির্দেশক। অস্বাভাবিকভাবে কম প্রস্রাব হওয়া বা খুব ঘন ঘন প্রস্রাব-দুটোই চিন্তার বিষয়। ডায়াবেটিস, কিডনি স্টোন, ইনফেকশন বা উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি ক্ষতি এভাবে ধরা পড়ে।
ইউরিনালাইসিস: সমস্যার ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম'ঃ প্রস্রাব নিয়ে সন্দেহ হলে সবচেয়ে সহজ এবং নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হল ইউরিনালাইসিস। এই পরীক্ষায় প্রস্রাবের রাসায়নিক গঠন, প্রোটিন, শর্করা, রক্ত, স্ফটিক বা সংক্রমণের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। কিডনির ক্ষতি বা কার্যকারিতা কমে যাওয়া শুরুতেই ধরা পড়লে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয় এবং বড় জটিলতা এড়ানো যায়।
কারা বেশি সতর্ক থাকবেন? ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যা, স্থূলতা বা আগে কিডনির সমস্যা ছিল এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের পরিবর্তন আরও গুরুত্ব বহন করে। তাঁদের নিয়মিত জলপান, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং বছরে অন্তত একবার ইউরিনালাইসিস করানো প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্রাব আমাদের শরীরের প্রতিদিনের রিপোর্ট কার্ডের মতো। একটু নজর দিলে বিপজ্জনক রোগও প্রথম দিকে শনাক্ত করা যায়। তাই প্রস্রাবের রং, গন্ধ বা পরিমাণে সামান্য পরিবর্তন দেখলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিডনি সুস্থ রাখতে নিজের প্রস্রাবে নজর রাখুন, এটি স্বাস্থ্য রক্ষার সবচেয়ে সহজ অভ্যাস।
