আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটা সময় ছিল, যখন ‘কৃত্রিম গর্ভ’ শুনলেই মনে হত কোনও সায়েন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্যপট। কিন্তু আর নয়! জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ গবেষণায় সেই কল্পনা এবার সত্যি হওয়ার দোরগোড়ায়। মাতৃগর্ভে না রেখে কীভাবে  ভ্রূণকে বড় করে তোলা যায় সম্পূর্ণ কৃত্রিম পরিবেশে সেই পদ্ধতিই আবিষ্কার করেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে

জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া-র বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি যৌথভাবে এমনই এক কৃত্রিম গর্ভব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যার নাম ইভিই বা এক্স ভিভো ইউটেরাইন এনভায়রনমেন্ট।
তাঁদের দাবি, এটি কোনওভাবে ‘শিশু তৈরি’র প্রযুক্তি নয়। বরং সময়ের অনেক আগেই জন্ম নেওয়া ‘প্রি ম্যাচিওর’ শিশুদের বাঁচিয়ে রাখাই এর একমাত্র উদ্দেশ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিষয়টিকে এক ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ হিসাবে ধরা হচ্ছে

লক্ষ্য প্রাণরক্ষা
বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য কৃত্রিম ভাবে মানবশিশু তৈরি করা নয়। বরং গর্ভাবস্থার ২৪ সপ্তাহ বা তারও আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের বাঁচিয়ে রাখাটাই এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য। এই ধরনের শিশুদের সাধারণত ইনকিউবেটরে রাখা হয় ঠিকই, কিন্তু তাদের ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ মায়ের শরীরের বাইরে ঠিকঠাক গঠিত হতে পারে না। ফলে বাইরের জগতে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। অধিকাংশ শিশুই প্রাণ হারায়, কেউ কেউ সারাজীবনের জন্য শারীরিক জটিলতায় জর্জরিত হয়ে বেঁচে থাকে। সেই জায়গাতেই নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে এই পদ্ধতি।
কেমন কাজ করে এই ‘কৃত্রিম গর্ভ’?
এই পদ্ধতিতে অপরিণত শিশুটিকে রাখা হয় এক স্বচ্ছ তরলভর্তি ‘বায়োব্যাগ’-এর মধ্যে। এই ব্যাগটি অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা মাতৃগর্ভের তরল পরিবেশের নিখুঁত অনুকরণ। শিশুর নাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকে একটি বিশেষ যন্ত্র, যা কার্যত ‘কৃত্রিম প্লাসেন্টা’ বা মায়ের নাড়ির ভূমিকা পালন করে।
এই যন্ত্র ঠিক মায়ের গর্ভের মতোই রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে, কার্বন ডাই-অক্সাইড বার করে দেয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই পদ্ধতিতে শিশুর অপরিণত ফুসফুসের উপর কোনও বাড়তি চাপ পড়ে না। ফলে, গর্ভের মতোই নিরাপদ পরিবেশে সে বেড়ে উঠতে পারে। ফলে আরও কয়েক সপ্তাহ মাতৃগর্ভে থাকার মতোই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে গঠিত হয়।

সফল পরীক্ষা হয় ভেড়ার ছানার উপর
গবেষণাটি এখনও মানবশিশুর স্তরে পৌঁছোয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই ভেড়ার অপরিণত ভ্রূণ নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছেন এবং আশাজনক সাফল্যও পেয়েছেন। কৃত্রিম গর্ভে রেখে তাঁরা সফলভাবে বড় করে তুলেছেন ভেড়ার ছানাটিকে। এই ফলাফল চিকিৎসাবিজ্ঞানে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। গবেষকদের দাবি, ভবিষ্যতে মানবশিশুর জীবন রক্ষায় এই প্রযুক্তি বড় ভূমিকা নিতে পারে

প্রশ্ন উঠছে নৈতিকতা নিয়ে
তবে আশার আলো যতই উজ্জ্বল হোক, তার সঙ্গে রয়েছে নৈতিক দ্বন্দ্বও। এই প্রযুক্তি কি তবে জীবনের প্রাকৃতিক ধারাকেই পাল্টে দিতে চলেছে? শিশুর জন্মের মতো সূক্ষ্ম ও মানবিক প্রক্রিয়ায় যন্ত্রের হস্তক্ষেপ কি আদৌ উচিত? এই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তর্ক-বিতর্ক।

বিজ্ঞানীরাও মানছেন, মানুষের উপর এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হতে এখনও অনেক পথ বাকি। একদিকে রয়েছে কঠোর গবেষণা, অন্যদিকে রয়েছে নৈতিক মূল্যায়নের প্রশ্ন। তবে সকল বাধা পেরিয়ে এই প্রযুক্তি যদি সফল হয়, তবে নবজাতকের চিকিৎসা পদ্ধতিতে তা এক যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে এই নিয়ে সংশয় নেই কোনও পক্ষেরই।

ভবিষ্যত কোনদিকে?
কৃত্রিম গর্ভ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, একথা অনস্বীকার্য যে প্রিম্যাচিওর শিশুদের বাঁচাতে এটি হতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। সময় বলবে, এই প্রযুক্তি কতটা বদল আনতে পারে মানবজন্মের ইতিহাসে। কিন্তু আপাতত, চিকিৎসাবিজ্ঞান এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করল সে কথা বলাই যায়।