রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৪ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে আসছেন ২৩তম ভারত–রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে। এই উচ্চস্তরের বৈঠককে সামনে রেখে রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৫০০ ‘প্রমিথিউস’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ঘিরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ভারতীয় মহলে।
2
10
শুধু এস-৫০০ নয়, সম্ভাব্য আলোচনার তালিকায় রয়েছে সু-৫৭ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানও। ভারত ইতিমধ্যেই রাশিয়ার এস-৪০০ সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা সাম্প্রতিক পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নতুন প্রজন্মের এস-৫০০ যুক্ত হলে ভারতের আকাশ ও নিকট-মহাকাশ প্রতিরক্ষা এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
3
10
এস-৫০০ মূলত ২১ শতকের সবচেয়ে কঠিন সমস্যা মোকাবিলার জন্য তৈরি। অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল, হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, এমনকি নিম্ন-কক্ষপথের স্যাটেলাইট পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে এই সিস্টেম।
4
10
এটি ৬০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ব্যালিস্টিক টার্গেট ধ্বংস করতে পারে এবং ২০০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে নিম্ন-কক্ষপথের স্যাটেলাইট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই উচ্চতায় আঘাত হেনে সিস্টেমটি কেবল আকাশ প্রতিরক্ষাই নয়, প্রায় মহাকাশ প্রতিরক্ষার ক্ষমতাও অর্জন করে।
5
10
বিশেষ ৭৭এন৬-এন এবং ৭৭এন৬-এন১ মিসাইল ব্যবহার করে এস-৫০০ সরাসরি গতিশক্তির মাধ্যমে স্যাটেলাইট বা হাইপারসনিক অস্ত্র ভেঙে ফেলে। মোবাইল ট্রাকে বসানো লঞ্চার থেকে ছুড়ে দেওয়া এই মিসাইলগুলো প্রতি সেকেন্ডে ৭ কিলোমিটার গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে।
6
10
গেলিয়াম নাইট্রাইড-ভিত্তিক রাডারগুলো ২,০০০ কিলোমিটার দূর থেকে হামলা শনাক্ত করতে পারে। একসঙ্গে প্রায় ১০টি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করা এবং ৪ সেকেন্ডেরও কম সময়ে প্রতিক্রিয়া জানানো এই সিস্টেমের সবচেয়ে বড় শক্তি।
7
10
৯১এন৬এ(এম) রাডার মহাকাশের ৮০০-২,০০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইট শনাক্ত করতে পারে, এরপর মিসাইলকে সেই লক্ষ্যে পথ নির্দেশ দেয়। মিসাইলটি হয় সরাসরি সংঘর্ষে স্যাটেলাইট ধ্বংস করে, নয়তো নিকটবর্তী বিস্ফোরণে তাকে নিষ্ক্রিয় করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এতে পারমাণবিক ওয়ারহেডের প্রয়োজন পড়ে না।
8
10
চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সামরিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য এস-৫০০ একটি বড় শক্তিবৃদ্ধি হতে পারে। চীনের এস-৪০০ কপি সিস্টেম এবং তাদের দ্রুত বাড়তে থাকা হাইপারসনিক অস্ত্র ভাণ্ডারের মুখে ভারত এই নতুন প্রজন্মের প্রতিরক্ষা পেলে আকাশসীমা ও মহাকাশসীমায় আবারও প্রাধান্য অর্জন করতে পারবে।
9
10
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের অধীনে ইসলামাবাদের কথিত যুদ্ধোন্মাদ নীতি এবং ড্রোন–স্ট্যান্ডঅফ অস্ত্র ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে এস-৫০০ ভারতের জন্য বড় প্রতিরক্ষাচ্ছায়া তৈরি করবে। এটি ভারতের নেভিগেশন, গোয়েন্দা, ও মিসাইল নির্দেশনা স্যাটেলাইটগুলোকে শত্রুর কক্ষপথ-নির্ভর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
10
10
এস-৫০০ কেবল আঞ্চলিক আকাশ প্রাধান্য বাড়াবে না, ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত করতে সাহায্য করবে। স্যাটেলাইট নির্ভর হামলা প্রতিরোধ এবং প্রয়োজনে আকাশ–মহাকাশে পূর্বলক্ষ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা এনে দেবে। পুতিনের আসন্ন দিল্লি সফর তাই ভারতের ভবিষ্যৎ মহাকাশ–প্রতিরক্ষা সক্ষমতার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।