সঙ্গীতচর্চা শুধু শিল্প নয়, মস্তিষ্কের জন্যও বড় উপকার বয়ে আনে। সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং মার্কিন গবেষকদের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত, তারা একসঙ্গে একাধিক শব্দ বাজলেও মনোযোগ ধরে রাখতে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি দক্ষ।
2
8
গবেষকরা জানিয়েছেন, সঙ্গীতচর্চা মানুষের টপ-ডাউন অ্যাটেনশন অর্থাৎ লক্ষ্যনির্ভর মনোযোগকে শক্তিশালী করে এবং বটম-আপ অ্যাটেনশন যা হঠাৎ শোনা শব্দ বা আকস্মিক ঘটনার দিকে টেনে নেয়তাকে দুর্বল করে। ফলে জটিল পরিস্থিতিতেও শ্রোতারা প্রয়োজনীয় শব্দে মনোযোগ স্থির রাখতে পারেন।
3
8
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একসঙ্গে দুটি সুর শোনানো হয়। তাদের মধ্যে একটি সুরের স্বর পরিবর্তন লক্ষ্য করতে বলা হয়। মস্তিষ্কের কার্যকলাপ মাপতে ব্যবহার করা হয় ম্যাগনেটোএনসেফালোগ্রাফি যা সূক্ষ্ম চৌম্বক ক্ষেত্র রেকর্ড করে। প্রতিটি সুরকে আলাদা ৪০ হার্টজের কাছাকাছি রিদমে "ট্যাগ" করা হয়েছিল, যাতে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে আলাদা করে ধরা যায়।
4
8
ফলাফলে দেখা যায়, যাদের সঙ্গীতের দক্ষতা বেশি, তাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টোপারিয়েটাল অঞ্চলে টপ-ডাউন নিয়ন্ত্রণ সিগন্যাল শক্তিশালী হয়। বিপরীতে, বিভ্রান্তিকর উদ্দীপনার টান কম থাকে। এছাড়া যেসব অংশগ্রহণকারীর মনোযোগ ধীরে ধীরে টোন চলাকালীন সময়ে চূড়ান্তে পৌঁছায়, তারাই ভালো ফল করেছেন।
5
8
গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গীতজ্ঞান মাপতে ব্যবহার করেন গোল্ডস্মিথস মিউজিকাল সোফিস্টিকেশন ইনডেক্স। শুধু কত বছর প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়েছে তা নয়, বরং দক্ষতা, আগ্রহ, ও অংশগ্রহণের মতো নানা বিষয়কে এই সূচক বিবেচনায় নেয়।
6
8
শ্রুতিবিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই জানেন যে, সঙ্গীতচর্চা ভাষা বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়ক। তরুণদের ওপর করা পূর্ববর্তী পরীক্ষা, যেমন হিয়ারিং ইন নয়েজ টেস্ট, দেখিয়েছে—যাদের দীর্ঘদিনের সঙ্গীতচর্চা আছে তারা কোলাহলের মধ্যে থেকেও কথোপকথন অনেক ভালোভাবে বুঝতে পারেন। অন্যদিকে সঙ্গীতচর্চা না থাকলে সেই দক্ষতা কম থাকে।
7
8
গবেষণার মূল বার্তা হল, নিয়মিত সঙ্গীতচর্চা মস্তিষ্কে এমন একধরনের অভিযোজন ঘটায় যা মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায় হাইপোথেসিস-এর মাধ্যমে। এই ধারণা অনুযায়ী, সঙ্গীতের মধ্যে থাকে উচ্চমাত্রার নির্ভুলতা, আবেগ, পুনরাবৃত্তি এবং গভীর মনোযোগের দাবি।
8
8
এগুলি একই সঙ্গে ভাষা প্রক্রিয়াজাতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সঙ্গীতচর্চা মস্তিষ্ককে এমনভাবে শাণিত করে যে, তার সুফল ভাষা বোঝা কিংবা জটিল শব্দ পরিবেশ সামলাতেও কাজে লাগে।