আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাইয়ে এয়ার শোয়ের জন্য প্র্যাকটিস ফ্লাইট চলাকালীন ভারতীয় বায়ুসেনার তেজস যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে উইং কম্যান্ডার নমনশ সিয়ালের (৩৪)।

শুক্রবার দুপুরে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস বিমানের প্রদর্শনী উড়ানের সময়ই ঘটে বিপর্যয়। জানা গিয়েছে, সিয়াল হিমাচল প্রদেশের নাগরোটা বাগওয়ানের পাটিয়ালাকাড় গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

অনুশাসন, দক্ষতা এবং দায়িত্ববোধের জন্য বায়ুসেনায় বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। হামিরপুর জেলার সুজনপুর টিহরার সাইনিজ স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন উইং কম্যান্ডার সিয়াল।

রেখে গেলেন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, যিনি নিজেও বায়ুসেনার কর্মকর্তা এবং ছয় বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে। জানা গিয়েছে, নমনশের বাবা জগন নাথ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।

অবসর নেওয়ার পর হিমাচল প্রদেশ শিক্ষা দপ্তরে প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর মা বীনা দেবী দুর্ঘটনার সময় হায়দরাবাদে ছেলে-ছেলেবউয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।

ফলে সিয়াল পরিবারের বাড়ি কয়েক দিন ধরেই তালাবন্ধ ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় সিয়ালের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছাতেই শোকের ছায়া নেমে আসে সমগ্র কাংরা উপত্যকায়। গ্রামের বাড়ির সামনে জড়ো হন প্রতিবেশীরা।

শীত কাটাতে আগুন জ্বেলে বসেছিলেন অনেকে, কিন্তু কারও মুখে কথা নেই। সকলেই হতবাক দেশের সাহসী সন্তানের অকাল প্রয়াণে। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু গভীর শোক প্রকাশ করে জানান, দেশ এক অকুতোভয় ও প্রাণ নিবেদিত করা যোদ্ধাকে হারাল। দেশের প্রতি তাঁর আনুগত্য, দায়িত্ববোধ এবং বীরত্ব সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় উল্লেখ করেন। পরিবারকেও জানান সমবেদনা।

দুবাই এয়ার শোতে প্রদর্শন চলাকালীন ভারতের তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান ‘তেজস’ মর্মান্তিকভাবে ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সময় দুপুর প্রায় ২টা ১০ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

এয়ার শোতে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক সেই সময় রণতরীর আকাশচুম্বী কসরত ও গতিবেগের প্রদর্শন উপভোগ করছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তেজস মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার বিশাল মেঘ ছড়িয়ে পড়ে।  

দুর্ঘটনায় পাইলট গুরুতরভাবে আহত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতীয় বায়ুসেনা এই মর্মান্তিক প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে।

দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্য একটি আদালত-নির্ধারিত তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে। দর্শকদের মধ্যেই ছিলেন বহু নারী, শিশু ও আন্তর্জাতিক পর্যটক, যাঁরা হঠাৎ এই দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বিমানের কৌশল প্রদর্শনের সময় হঠাৎই তার গতি ও উচ্চতায় পরিবর্তন দেখা যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি নিচের দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার আগেই তীব্র শব্দে ভূমিতে পতিত হয়।

ধাক্কার পরপরই আগুন ধরে যায় এবং আগুনের শিখা দ্রুত উপরের দিকে উঠতে থাকে। দুর্ঘটনার পরই এয়ার শো কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান স্থগিত করে। জরুরি পরিষেবার কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন এবং চারদিক ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন।