বলিউডে এমন পরিচালক মেলা ভার যে যাঁর নামে ‘একটাও’ ফ্লপ নেই। আর সেই বিরল নামটি হল রাজকুমার হিরানি। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ থেকে ‘ত্রাহি ইডিয়টস’, পিকে’ থেকে ‘সঞ্জু’ -প্রতি ছবিতেই যেন তিনি দর্শকদের জন্য তৈরি করেন এক নতুন দুনিয়া, যেখানে হাসি, কান্না, দর্শন আর জীবনবোধ একসঙ্গে হাত ধপরাধরি করে এগিয়ে চলে। কিন্তু এই সুপারহিট নির্মাতার পথচলা মোটেও ছিল না সিনেমার গল্পের মতো মসৃণ।
2
9
১৯৬২ সালে নাগপুরে এক সাধারণ সিন্ধি পরিবারে জন্ম হিরানির। তাঁর বাবা সুরেশ হিরানি মাত্র ১৪ বছর বয়সে দেশভাগের সময় পাকিস্তানের সিন্ধ থেকে ভারতে চলে আসেন। নতুন দেশে শুরু করেন ছোট্ট একটি টাইপরাইটিং ইনস্টিটিউট। তাতে শুরুতে মাত্র দু’টি টাইপরাইটার। কয়েক মাসের মধ্যেই ছাত্র সংখ্যা হাজার ছুঁয়ে যায়। কিন্তু কালক্রমে টাইপরাইটারকে পিছনে ফেলে প্রযুক্তির দুনিয়া চলে যায় কম্পিউটারে। বন্ধ হয়ে যায় তাঁদের ব্যবসা।
3
9
এদিকে বাবা-মা চেয়েছিলেন ছেলেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বানাতে। কিন্তু হিরানির ভেতরে তখন জ্বলছে অন্য আগুন। অভিনয় আর থিয়েটারের। কলেজজীবনে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করতেন তিনি। ছেলের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে বাবা-মা তাঁকে পাঠান মুম্বইয়ের এক অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। কিন্তু সেখানে নিজের জায়গা খুঁজে পাননি রাজকুমার। কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরে এলেন।
4
9
এরপর নিজেকে নতুনভাবে গুছিয়ে নিলেন। ভর্তি হলেন পুণের এফটিআইআই–এর পরিচালনা বিভাগে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা দেখে হাতে নিলেন আপস-ডিরেকশন নয়, ভর্তি হলেন এডিটিং কোর্সে। পড়াশোনা শেষে কয়েক বছর লড়াই করলেন মুম্বইয়ে সম্পাদক হিসেবে কাজ পাওয়ার জন্য। সফল না হয়ে ঢুকে পড়েন বিজ্ঞাপনের জগতে। সেখানে ধীরে ধীরে তৈরি হয় তাঁর নিজস্ব ছবির ভাবনা, ছবির ভাষা।
5
9
হঠাৎই জীবনে আসে মোড়- আচমকা ফোন করেন পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। ‘১৯৪২: এ লভ স্টোরি’-র ট্রেলার তৈরির দায়িত্ব পান হিরানি। এরপর ‘মিশন কাশ্মীর’-এর মতো প্রথম বড় বাজেটে ছবির সম্পাদনার কাজ। সেখান থেকেই শুরু ‘বড় পর্দা’র যাত্রা।
6
9
২০০৩ সালে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ-‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’। আর তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সুপারহিট ‘লগে রহো মুন্নাভাই’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘সঞ্জু’।
7
9
আজ হিরানি নামটাই বলিউডে বিশ্বাসের প্রতীক। চারটি জাতীয় পুরস্কার... পুরস্কার-তালিকা দীর্ঘ হোক বা না হোক, হিরানির আসল শক্তি হল তাঁর গল্প বলার সততা।
8
9
আর মজার ব্যাপার তাঁর প্রতিটি ছবি প্রথম দেখেন স্কুলজীবনের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সোজাসাপটা রিভিউয়ের ওপরই ভরসা রাখেন রাজকুমার। হয়তো তাই দর্শকের হৃদয়ে এত সহজে জায়গা করে নেন তাঁর গল্পগুলো।