বলিউডের সঙ্গীত ইতিহাসে ‘কজরা রে’ নিঃসন্দেহে এক কালজয়ী অধ্যায়। ঝকঝকে কোরিওগ্রাফি, গুলজারের দুর্দান্ত কথামালা, আর আলিশা চিনাই–শঙ্কর মহাদেবন–জাভেদ আলির গাওয়া সুরেলা কণ্ঠ মিলিয়ে গানটি হয়ে উঠেছিল ২০০০-এর দশকের এক অনন্য সাংস্কৃতিক মুহূর্ত। কিন্তু জানেন কি, এই গান নিয়ে এক সময় বেশ বড়সড় টুইস্ট ঘটতে চলেছিল? সম্প্রতি এক আড্ডায় সুরকার শঙ্কর মহাদেবন ফাঁস করলেন এক বিস্ময়কর তথ্য—প্রথমে পরিকল্পনা ছিল অমিতাভ বচ্চন গানটির নিজের অংশ নিজেই গাইবেন!

শঙ্করের কথায়, “আমি যখন গানটা রেকর্ড করি, অমিতজির অংশটাও গেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম উনি পরে এসে ডাব করবেন। উনি দারুণ সঙ্গীতজ্ঞ, তাই ফোন করে বললাম—‘স্যার, কবে আসছেন ডাবিং করতে?’ শুনে উনি বললেন, ‘কোন ডাবিং?’ আমি বললাম, ‘আপনার অংশ তো বাকি।’ তখন উনি হেসে বললেন, ‘এভাবেই থাকবে। তুমি এত ভাল গেয়েছ, যদি অন্য কারও কণ্ঠ দাও, তবে সাবধান… তোমার কেরিয়ার শেষ করে দেব!’—অবশ্যই মজা করে এ কথা বলেছিলেন উনি।” অর্থাৎ, শঙ্করের গাওয়া ‘কাঁচা’ রেকর্ডিংই থেকে যায় স্থায়ী। আর সেই সিদ্ধান্তই ইতিহাস গড়ে দেয়।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গানের শুরুতে পরিচালক শাদ আলি-রও বেশ লড়াই করতে হয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমি আট সেকেন্ডের একটা রিফ শুনেই বুঝেছিলাম, গানটা সুপারহিট হবে। কিন্তু যশরাজ এটাকে লিস্টে একেবারে নিচে রেখেছিল—ভেবেছিল, এটিই সবচেয়ে কম জনপ্রিয় হবে। এমনকি অমিতজি নিজেও বলেছিলেন, ‘এই গানটা শুটই করো না।’”

তবু শাদ নিজের জেদে অনড় ছিলেন। তিনি গান শোনাতে নিয়ে যান অমিতাভকে। প্রতিক্রিয়া? “উনি সরাসরি বললেন—এই গান চলবে না।”

কিন্তু সময় প্রমাণ করল, ভুল করেছিলেন স্বয়ং ‘বিগ বি’। ‘কজরা রে’ শুধু সুপারহিট নয়, আজও বিয়ের আসর থেকে শুরু করে পার্টি–ক্লাবের প্লেলিস্টে রাজত্ব করছে।বলিউডের ইতিহাসে অনেক গান এসেছে, গেছে। কিন্তু ‘কজরা রে’-এর ঝলকানি আজও অমলিন—একেবারে আইকনিক কালচারাল ফেনোমেনন।

‘বলিউডের অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর তকমা পেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। পর্দায় দীর্ঘদেহী, সুঠাম চেহারার যুবকের গাম্ভীর্য মন জয় করেছিল দর্শকের। এর পর পেরিয়েছে কয়েক দশক। সেই যুবক এখন ৮২-র বৃদ্ধ। বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। অতীতের সেই শক্তি, মেজাজ এখন খানিক আবছা। নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুললেন বর্ষীয়ান অভিনেতা।১৭ আগস্ট, রবিবার নিয়ম মেনেই বাড়ির বাইরে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন অমিতাভ। তারপরেই ব্লগে লেখেন তাঁর দৈনন্দিন জীবনের নানা পরতের কথা। অভিনেতা লেখেন, ‘শরীর ক্রমাগত ভারসাম্য হারাচ্ছে। সেটাকে ঠিক রাখতে এবং সারিয়ে তুলতে পরিশ্রম করতে হয়।’

দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলি করতেও বেগ পেতে হয় এখন। তেমনই জানিয়েছেন অমিতাভ। তিনি মনে করেছিলেন, কয়েক বছর আগে যে কাজগুলি করতেন, সেগুলি নতুন করে শুরু করা খুব কঠিন হবে না। তবে সময় তাঁকে ভুল প্রমাণ করেছে। একদিন কোনও কারণে চর্চার বাইরে থাকলেও ব্যথা বশ করে ফেলে শরীরকে। হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি, পায়ে ট্রাউজাটুকু গলাতেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি জানান, চিকিৎসক তাঁকে কোথাও একটা বসে ট্রাউজার পরার উপদেশ দিয়েছেন।

অমিতাভ লেখেন, ‘এগুলো বিশ্বাস করতে পারি না। মনে মনে হাসি। তারপর বুঝি ওঁরাই ঠিক বলছেন।’ বাড়িতে চলাফেরার সময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পদে পদে থাম ধরতে হয় তাঁকে। মেঝেতে পড়ে যাওয়া কাগজটুকু তোলাও যেন কষ্টসাধ্য।

জীবনের এই পরিবর্তনকে মেনে নিয়েছেন অমিতাভ। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘কিন্তু আমি আপনাদের বলতে চাই, এটা আমাদের সকলের জীবনেই ঘটবে... আমি চাই এমন যেন না হয়... কিন্তু সময়ের সঙ্গে এটা হবে... আমরা যেদিন এই পৃথিবীতে আসি, সেদিনই অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যাই... জন্মের সময় থেকেই পতনের প্রবণতা শুরু হয়... দুঃখজনক...কিন্তু এটাই জীবন এবং জীবনের বাস্তবতা...’।