পঙ্কজ ত্রিপাঠী নাকি করিশ্মা কাপুরের প্রত্যাবর্তন? ‘মার্ডার মুবারক’-এ তুরুপের তাস খুঁজলেন পরমা দাশগুপ্ত 

‘শোলে’র সেই বিখ্যাত সংলাপ মনে পড়ে? ‘অংরেজো কে জমানে কা জেলার হ্যায়!’ নেটফ্লিক্সে নতুন ছবি ‘মার্ডার মুবারক’-এর শুরুটা দেখতে দেখতে সেটাই মনে পড়ে গেল সবার আগে! কারণ? এ গল্পের কেন্দ্রবিন্দু এক ‘অংরেজো কে জমানে কা ক্লাব’। যেখানে আজও ব্রিটিশ আমলে থেমে আছে সময়- নিয়মকানুনে, বিলাসব্যসনে, আভিজাত্যের সদর্প ঘোষণায়, এমনকী পোষা বেড়ালের নামকরণেও। আর সেখানেই খুন। একটা নয়, একাধিক। বাকিটা ‘হু-ডান-ইট’। 

ইদানীং ওটিটি-তে বহু সিরিজ বা ছবিতেই দেখা মিলছে দিল্লির এলিট ক্লাসের। প্রতিপত্তি, আভিজাত্য, বিলাসবহুল জীবন তো বটেই, গল্পের অলিগলিতে ধরা দিচ্ছে দিল্লিওয়ালি বিত্তশালীদের জীবন-যাপনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা গোপন সব সমীকরণ। অনুজা চৌহানের উপন্যাস অবলম্বনে এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। পঙ্কজ ত্রিপাঠী, সারা আলি খান, বিজয় বর্মা, করিশ্মা কাপুর, ডিম্পল কাপাডিয়া, সঞ্জয় কাপুর, টিস্কা চোপড়া-সহ অনসম্বল কাস্ট যার ভাঁড়ারে। বলিষ্ঠ অভিনয়ের হাত ধরে এই ছবি তাই শুধু মার্ডার মিস্ট্রি হয়ে থেমে থাকেনি, সোশ্যাল স্যাটায়ার হিসেবেও দাগ কাটছে। 

গল্পের শুরুতে ক্লাবের জিম ট্রেনারের দেহ উদ্ধার ঘিরে হইচইয়ের ফাঁকে তদন্তে হাজির এসিপি ভবানী সিং (পঙ্কজ)। অচিরেই বোঝা যায়, নিছক দুর্ঘটনা নয়, তা পুরোদস্তুর খুন। একেবারে ‘ট্রেডমার্ক ত্রিপাঠী’ ঢংয়ে মাটির কাছাকাছি, সরল অথচ সোজাসাপ্টা এবং রসবোধে ভরপুর ভবানী জেরা শুরু করেন। খানিকটা খুনসুটির মেজাজেই তাই চলতে থাকে তদন্ত। এবং দেখা যায়, ক্লাবের একের পর এক সদস্য- অতীতের ঠাটবাটের আড়ালে বর্তমানের দারিদ্র্য লুকোতে চাওয়া রাজা সাব (সঞ্জয়), একদা নামী হিরোইন, এখনকার বিগ্রেড সিনেমার নায়িকা শেহনাজ নুরানি (করিশ্মা), সুরায় ডুবে থাকা কুকি কটোচ (ডিম্পল), সদা লাস্যময়ী থাকতে চাওয়া রোশনি বাটরা (টিস্কা চোপড়া), স্বামীকে অকালে হারিয়ে প্রেমেই বাঁচার স্বাদ খুঁজতে চাওয়া ব্যাম্বি টোডি (সারা), তাকে আগলে রাখা আইনজীবী বন্ধু আকাশ ডোগরা (বিজয়) কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। যেমন নন অভিজাত ক্লাবের অহঙ্কারী ম্যানেজার(দেবেন ভোজানী) কিংবা ডিমেনশিয়ায় ভোগা বিশ্বস্ত বেয়ারা গুপ্পিরাম (ব্রিজেন্দ্র কালা)। খুনের মামলার দড়ি টানাটানিতে বেরিয়ে আসে সর্বনাশা ড্রাগের নেশা কিংবা ব্ল্যাকমেলিংয়ের সূত্রও। বেড়ে যায় খুনের সংখ্যাও। কিন্তু কে রয়েছে এ সবের পিছনে? ক্লাইম্যাক্সে প্রায় ফেলুদার ঢংয়ে ক্লাবের সব সদস্যকে জড়ো করে সেটাই ফাঁস করেন ভবানী। যার হাত ধরে বেরিয়ে আসে আরও একাধিক অজানা কাহিনি। 




‘বিয়িং সাইরাস’-এর মতো এ ছবিতেও হোমি আদাজানিয়ার পরিচালনা হেঁটেছে ডার্ক থ্রিলারের পথে। কমেডির বুনোটে ঢিমেতালে সুতো ছাড়তে ছাড়তে এগিয়েছে গল্প। শুরুর দিকটায় খানিক অগোছালো মনে হয় ঠিকই। তবু চিত্রনাট্যের ভাঁজে ভাঁজে, ফাঁকেফোকরে, পেঁয়াজের খোসার মতো একটু একটু করে রহস্যের পরত ছাড়িয়ে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে সফল হোমি।  

পঙ্কজ যথারীতি অসাধারণ। ওটিটিতে প্রথম পা রেখে করিশ্মার প্রত্যাবর্তনও নজরকাড়া। পঙ্কজের সঙ্গেই সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে তাঁর কমিক টাইমিং। দুই ভেটারেনের অভিনয়ের বলিষ্ঠতার সঙ্গে দিব্যি টক্কর দিয়েছেন সারা, বিজয়ও। যদিও গ্ল্যামারে, স্মার্টনেসে ঝলমলে সারাকে একটু বাড়তি নজর কাড়ার চেষ্টায় দেখা যায় কোথাও কোথাও। ডিম্পল, সঞ্জয়, টিসকা-সহ বাকিরাও যে যার মতো করে চোখ টেনেছেন।   
তবে হ্যাঁ, খুনের রহস্যের সমান্তরালে চলেছে বিজয়-সারার অদ্ভুত প্রেমকাহিনি। কখনও কখনও যা আসল গল্পের চেয়েও গুরুত্ব পেয়েছে খানিকটা বেশি। সেটা না হলেও বোধহয় চলত।