বেঁচে থাকলে এদিন তাঁর বয়স হত ৮২। তিন বছরে, একের পর এক ১৭টি হিট বক্স অফিস সফল ছবি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি, বলিউডের প্রথম সুপারস্টার রাজেশ খান্না। আবার মুদ্রার উল্টো পিঠে তিনি-ই বলিউডের অন্যতম ট্র্যাজিক নায়ক। তবে বলিপাড়ার সবচেয়ে আলোচিত জুটিদের তালিকায় রাজেশ খান্না ও ডিম্পল কপাডিয়ার নাম আজও আলাদা গুরুত্বে উচ্চারিত হয়। পর্দার মতো বাস্তবেও তাঁদের প্রেম যেন ছিল এক  অদ্ভুত রূপকথা। ঝলমলে স্টারডম, আলো-আঁধারে মোড়া দাম্পত্য। কিন্তু জাঁকজমক, ঠাট-বাটের দাম্পত্যের এই উজ্জ্বল আবরণ ভেদ করে যে একসময় তিক্ততার কাঁটা বেরিয়ে এসেছিল, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল  অনেক আগেই। আর সেই ইঙ্গিতের সূত্র ধরেই সামনে এল এই দাম্পত্যের এক অস্বস্তিকর স্মৃতি।

 

সেটা ছিল ‘জয় শিব শঙ্কর’ ছবির শুটিং। বিবাহিত জীবনে রাতারাতি নেমে আসা ফাঁক তখনই যেন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। পুরনো সাক্ষাৎকারে ডিম্পল জানান, শুটিং চলাকালীন অসুস্থ ছিলেন রাজেশ খান্না। তবু তাঁকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে হত। সেই সময় স্বামীর উদ্দেশ্যে ডিম্পল একটি ছোট্ট পরামর্শ দিয়েছিলেন, “কাকাজি, যখন বাইরে যাবেন, সোজা না তাকিয়ে সাইড প্রোফাইলে দাঁড়ান। আপনাকে বেশি ভাল দেখাবে।” কিন্তু প্রত্যুত্তরে এল সেই তীক্ষ্ণ, ঠান্ডা বাক্য, যা ডিম্পলের মনকে এক মুহূর্তে শীতল করে দিয়েছিল, “এবার তোমার থেকে আমাকে এসব শিখতে হবে?” আর এই বাক্যেই যেন তাঁদের দাম্পত্যের মধ্যে উধাও হয়ে গেল আদরের পালিশ। সামনে ফুটে বেরোল ক্ষমতার ব্যবধান, আত্মসম্মানের টানাপোড়েন আর দাম্পত্যের লুকোনো চাপা তিক্ততা।

 

 

১৯৭৩ সালে দেশজোড়া চর্চার মধ্যেই বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। ডিম্পল তখন মাত্র পনেরো বছরের তরুণী। ববি র পর আচমকা খ্যাতি পাওয়া এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী, আর রাজেশ খান্না তখন বলিউডের ‘প্রথম সুপারস্টার’, জনপ্রিয়তার শিখরে। বিয়ের পরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তাঁরা। দুই কন্যা সন্তানের জন্ম, সম্পর্কের বাইরে উঁকি মারা সন্দেহ, ব্যস্ততার চাপে দূরত্ব সব মিলিয়ে গাঢ় হতে থাকে অস্বস্তি। ১৯৮২ সালের পর কার্যত আলাদা পথের যাত্রী হয়ে যান এই দুই তারকা। তাঁদের আইনি বিচ্ছেদ হয়নি কখনও, কিন্তু মানসিক বিচ্ছেদ তখনই চূড়ান্ত। তবু শ্রদ্ধা, স্মৃতি আর সম্পর্কের নীরব ভার বহন করে গিয়েছিলেন দু’জনেই শেষ পর্যন্ত।

 

একদিকে রাজেশ খান্নার অদ্বিতীয় তারকাখ্যাতির ইতিহাস ৬৯ থেকে ৭১ পর্যন্ত একের পর এক ১৫টি একক সুপারহিট ছবি, বলিউডে যার নজির নেই। অন্যদিকে ডিম্পল, যিনি ভাঙা সম্পর্কে পিছনে না তাকিয়ে নিজের কেরিয়ার নতুন করে সাজিয়েছেন শক্ত হাতে। আলো-ছায়ায় মেশা এই গল্প বলিউড প্রেমীদের কাছে আজও এক গভীর আবেগ ও বিস্ময়ের আলোচনাপ্রিয় বিষয়।

 

বাইরের জাঁকজমক, দেখনদারি যতই ঝলমলে হোক, তার আড়ালে যে সম্পর্কের আপোসহীন বাস্তব লুকিয়ে থাকে রাজেশ-ডিম্পলের এই অধ্যায় যেন সেই সত্যটাকেই আরো একবার স্পষ্ট করে দেয়। প্রেমের রূপকথা তাই যতই ঝলমলে হোক, তার ভিতরের ফাটল কখনও কখনও একটিমাত্র বাক্যেই সবটা উন্মোচন করে দেয়।