পর্দায় অভিনেত্রীদের শরীরী প্রদর্শন, তাঁদের শরীরসর্বস্ব উপস্থাপনা ও ‘অবজেক্টিফিকেশন’ বিতর্ক ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনার মুখে থাকা পরিচালক রাম গোপাল বর্মা এবার প্রকাশ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। বছরের পর বছর যেসব মন্তব্য নিয়ে তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে, সেগুলিকে তিনি আদৌ নারীকে ‘পণ্যে পরিণত’ করা বলে মনে করেন না বলেই জানালেন রাম। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আটের দশকের শেষ ও নয়ের দশকে নিজের কাজ, মন্তব্য এবং লাস্যময়ী অভিনেত্রী ঊর্মিলা মাতণ্ডকর-কে ঘিরে ওঠা সম্পর্কের গুঞ্জন-সব নিয়েই মুখ খুলেছেন বিতর্কিত এই পরিচালক।

 

নয়ের দশকে ‘রঙ্গীলা’, ‘দৌড়’, ‘সত্য’, ‘প্যায়ার তুনে কিয়া কিয়া’ পরপর একাধিক ছবিতে ঊর্মিলাকে কেন্দ্র করে আলাদা ধাঁচের নারীচরিত্র তুলে ধরেছিলেন রাম। পর্দায় স্বল্পবসনা এই সুন্দরীকে দেখলে মেতে উঠত প্রেক্ষাগৃহ। নয়ের দশকের অভিনেত্রী ঊর্মিলাকে চেনেন না, এমন বলিউডপ্রেমী পাওয়া ভার। ‘রঙ্গিলা গার্ল’-এর প্রেমে তখন হাবুডুবু খেত একটা গোটা প্রজন্ম।  সেই ঊর্মিলার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, “ঊর্মিলা আমার মতে সবচেয়ে ভার্সাটাইল অভিনেত্রী। সেই কারণেই ওঁর সঙ্গে এত কাজ করেছি। আমি তো অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও বেশি কাজ করেছি, কিন্তু সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না।” রামুর কথায়, এই ধরনের চর্চা আসলে “সিস্টেম” এবং সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে কাজ করে, তারই প্রতিফলন।

 

শ্রীদেবীর বিতর্কিত ‘বজ্রের মতো উরু’ মন্তব্য প্রসঙ্গে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন রাম গোপাল বর্মা। তাঁর দাবি, এই মন্তব্যও আদৌ নারী শরীররকে কেন্দ্র করে নয়। “আমি যখন শ্রীদেবীর ‘উরু’ নিয়ে বলি, তখন সেটা ওঁর শরীরী সৌন্দর্যের প্রশংসা, যা ওঁর অভিনয় প্রতিভার পাশাপাশি আরও একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এটাকে অবজেক্টিফিকেশন বলা মানে আমার মন্তব্যকেই ভুলভাবে অবজেক্টিফাই করা,” বলেন তিনি।

 

উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া তেলুগু ছবি ‘ক্ষণা ক্ষণম’-এ শ্রীদেবীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন রাম গোপাল বর্মা। ছবিতে মধ্যবিত্ত নারী সত্যার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীদেবী, যিনি হঠাৎ করেই ব্যাঙ্ক ডাকাতদের টার্গেটে পরিণত হন। ভেঙ্কটেশ অভিনীত এক চোরের সঙ্গে তাঁর সেই অনিশ্চিত পালানোর গল্প আজও দর্শকদের মনে গেঁথে। শ্রীদেবীকে নিয়ে রাম আগেও একাধিকবার বলেছেন, তাঁর অভিনয় দক্ষতা ও পর্দায় উপস্থিতি তাঁর সিনেমার ভাষা গড়তে বড় ভূমিকা রেখেছে, এমন অভিনেত্রী দ্বিতীয় কেউ নেই।

 

এদিকে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন ছবির প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন পরিচালক। তাঁর আসন্ন হরর ড্রামা ‘পুলিশ স্টেশন মেঁ ভূত’ পুরোপুরি একটি থানার ভিতরেই আবর্তিত হবে। মুখ্য চরিত্রে থাকছেন মনোজ বাজপেয়ী। ২৭ বছর পর মনোজের সঙ্গে এই রিইউনিয়ন রাম গোপাল বর্মার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ইন্ডাস্ট্রি। শোনা যাচ্ছে, ছবিতে ‘ভূত’-এর মতোই টানটান, ডোম বন্ধ করা গল্প বুনবেন রাম গোপাল বর্মা।

 

নারী উপস্থাপনা নিয়ে বিতর্ক, অতীতের কাজের সাফাই ও নতুন হরর ছবির প্রস্তুতি, সব মিলিয়ে ফের আলোচনার কেন্দ্রে রাম গোপাল বর্মা।