পাপারাজ্জিদের সঙ্গে অভিনেত্রী জয়া বচ্চনের টানাপোড়েন নতুন নয়। কখনও ঠান্ডা, কখনও গরম- তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে এই সম্পর্ক নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে সোমবার সেই বিতর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জয়ার এক মন্তব্যে।

 

একটি অনুষ্ঠানে কথোপকথনের সময় জয়ার কাছে প্রশ্ন রাখা হয় পাপারাজ্জিদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে। উত্তরে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, তাঁর সঙ্গে পাপারাজ্জিদের সম্পর্ক “শূন্য”। জয়া বলেন, “আমি মিডিয়ারই তৈরি।  আমি তো মিডিয়া থেকেই এসেছি। আমার বাবা ছিলেন সাংবাদিক। এমন মানুষের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। আর এরা কারা? এরা কি এই দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার মতো প্রশিক্ষিত? এদের আপনি মিডিয়া বলেন?”

 

কিন্তু এই বক্তব্যের পরেই জয়া যা বলেন, তা নিয়েই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। তিনি বলেন,“কিন্তু বাইরে যারা ড্রেনপাইপ টাইট, নোংরা প্যান্ট পরে, হাতে মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা ভাবে হাতে শুধু মোবাইল থাকলেই যে কারও ছবি তুলতে পারে, যা খুশি বলতে পারে। কী ধরনের মন্তব্য করে এরা! এরা কারা? কোথা থেকে আসে? কী শিক্ষা? কোন পরিবেশ থেকে উঠে আসে?”

বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর এই মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পাপারাজ্জিরা।

 

প্রখ্যাত পাপারাজ্জি পল্লব পালিওয়াল বলেন, “জয়াজি যা বলেছেন, সেটা দুঃখজনক। ওঁর নাতি অগস্ত্য নন্দর ছবি ‘ইক্কিস’ মুক্তি পেতে চলেছে। যদি আমরা ওঁর ছবির প্রচারমূলক অনুষ্ঠান না দেখাই, তখন কী হবে? অমিতাভজি প্রতি রবিবার বাড়ির বাইরে আসেন, সেখানে কিন্তু তখন কোনও বড় নামি সংবাদমাধ্যম থাকে না, থাকি আমরা পাপারাজ্জিরাই। শুধু চেহারা দেখে কাউকে বিচার করা ঠিক নয়। আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করি। উনি যদি মনে করেন আমরা ‘মিডিয়া’ নই, তাহলে বলি, আমরা ‘সোশ্যাল মিডিয়া’। প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আমাদের কনটেন্ট। জয়াজি যদি পাপারাজ্জিদের ছাড়াই অগস্ত্যের ছবির প্রচার করতে পারেন, নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এত বড় ব্যক্তিত্বের মুখে এমন কথা মানায় না।”

 

দীর্ঘদিন এই পেশায় যুক্ত মানব মঙ্গলানির বক্তব্য তুলনামূলক নরম, তবে বাস্তব। তিনি বলেন, “আমি জয়াজিকে খুব সম্মান করি। কিন্তু তিনি এখনও ডিজিটাল যুগের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি। প্রিন্ট থেকে ডিজিটালের এই বদলটা অনেকের পক্ষেই কঠিন। হয়তো তাঁর সন্তান বা নাতি-নাতনিরা তাঁকে বিষয়টা বোঝাতে পারবেন। তবে এটাও ঠিক, ইদানীং কিছু ইউটিউবার ও আলাদা কনটেন্ট ক্রিয়েটর কোনও নৈতিকতা না মেনে তারকাদের উসকে দেন, যাতে ভিডিও ভাইরাল হয়। এটা একেবারেই অনৈতিক এবং অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।”

 

আর এক জনপ্রিয় পাপারাজ্জি বরিন্দর চাওলা বিষয়টির আরও গভীরে গেলেন। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এই কাজ করছি। তারকারা যদি বলেন ছবি তুলবেন না, আমরা সম্মান করি। রণবীর কাপুর, রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন...সকলের ক্ষেত্রেই তাই হয়েছে। ২০২৩ সালে দিল্লিতে অমিতাভজির একটি ভিডিও আমার কাছে ছিল, যেখানে এক ভক্ত সেলফি তোলার জন্য তাঁর কাছে এগিয়ে গেলে, নিরাপত্তারক্ষীরা ধাক্কা দেয়। অমিতাভ বচ্চনের বয়স আর সম্মানের কথা ভেবে আমি সেই ভিডিওটা প্রকাশ করিনি, কারণ তাঁর সচিব অনুরোধ করেছিলেন। আমরা সম্মান রাখতে জানি। তবে সব ক্ষেত্রে ছেলেরা ঠিক নয়, সেটাও আমি মানি। কিন্তু কাদের উদ্দেশ্যে জয়া জি কথা বলছেন, সত্যিকারের পাপারাজ্জি না ইউটিউবার আর ফ্যানদের মিশ্রণ? কাউকে এভাবে অপমান করা ঠিক নয়। আমি তো সহকর্মীদের বলেছি, নিজেদের আত্মসম্মান বজায় রেখে এই মানুষদের বয়কট করো।”

 

সব মিলিয়ে, জয়া বচ্চনের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুধু ব্যক্তিগত অপছন্দের জায়গায় আটকে নেই। এই বিতর্ক তুলে ধরছে প্রিন্ট সংবাদমাধ্যম বনাম ডিজিটাল মিডিয়া, সম্মান বনাম স্বাধীনতা, এবং নৈতিকতা বনাম ভাইরাল সংস্কৃতি -এই সময়ের সবচেয়ে বড় সংঘাতগুলোকেই।