সংবাদ সংস্থা মুম্বই: একটা সময় যাঁর গলা শুনেই মুগ্ধ হতেন দর্শক, আজ তাঁর শরীর থেকেই বেরোচ্ছে পচা গন্ধ! পাকিস্তানের টেলিভিশনের এক অন্যতম জনপ্রিয় মুখ, অভিনেত্রী আয়েশা খানকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হল করাচির নিজের ফ্ল্যাট থেকে—তাও এক সপ্তাহ পর।
ঘটনাটি ঘটেছে করাচির গুলশন-ই-ইকবাল এলাকার ব্লক ৭-এ। প্রতিবেশীরা প্রথমে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই চোখ কপালে উঠে যায় পুলিশের—ঘরের এক কোণে পড়ে আছেন আয়েশা খান, নিথর, অর্ধগলিত দেহ, চারপাশে অসহনীয় দুর্গন্ধ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, প্রায় ৭ দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
একসময়ের টেলিভিশনের সুপারস্টার, ‘আফশান’, ‘অরুসা’, ‘মেহন্দি’, ‘দেহলিজ’, ‘বোল মেরি মচ্ছলি’, ‘টিপু সুলতান’, ‘আখরি চট্টান’—সাড়া জাগানো একের পর এক নাটকে ছিলেন তিনি মুখ্য ভূমিকায়। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনের পর্দায় আত্মপ্রকাশ, শুরু হয়েছিল রেডিও পাকিস্তানে কণ্ঠদান দিয়ে। খুব কম সময়েই অভিনয় দক্ষতায় জায়গা করে নিয়েছিলেন দর্শকের মনে। শাহরুখ অভিনীত 'রাজু বন গয়ে জেন্টেলম্যান' ছবিতেও দেখা গিয়েছিল আয়েশা খান-কে।
কিন্তু পরবর্তী জীবনে সবকিছুই যেন পালটে গিয়েছিল। এক সময়ের আলো ঝলমলে জীবন ছেড়ে নিঃসঙ্গতা আর অসুস্থতা গ্রাস করেছিল তাঁকে। শেষ জীবনটা কাটছিল একা, সন্তানদের সঙ্গও ছিল না। তিনি যে এতটাই একা, সেটা জানতেন না কারও। মৃত্যুর দিনেও কেউ পাশে ছিল না। তাঁর দেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল সেন্টারে। সেখান থেকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে সোহারাব গোঠে এধি ফাউন্ডেশনের মর্গে।
আয়েশা খান ছিলেন প্রাক্তন পুলিশ সুপার রিয়াসত-উল্লাহ খানের কন্যা এবং পাকিস্তানের আরেক বরেণ্য অভিনেত্রী খালিদা রিয়াসতের দিদি।অভিনেত্রী, মায়ের ভূমিকায় যেমন মুগ্ধ করেছিলেন, তেমনি এই নিঃসঙ্গ মৃত্যু হৃদয় ভেঙে দিল সহকর্মী ও ভক্তদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন উপচে পড়েছে শোকবার্তা। একজন ভক্ত লিখেছেন, “ছোটবেলায় টিভির সামনে বসে যাঁর জন্য অপেক্ষা করতাম, তাঁর এই পরিণতি মেনে নেওয়া যায় না।”
একটা প্রজন্মের শৈশব জুড়ে যাঁর উপস্থিতি ছিল, সেই আয়েশা খান আজ নেই। এবং চলে যাওয়ার এই উপায় যেন আমাদেরও মুখোমুখি করে দিল এক কঠিন প্রশ্ন—তারকারাও কি শেষ পর্যন্ত একা হয়ে পড়েন?
