বলিউডের ইতিহাসে আজও অন্যতম আলোচিত বিষয়— অমিতাভ বচ্চন আর রেখার সম্পর্ক। পর্দায় তাঁদের রসায়ন আজও কালজয়ী। তবে পর্দার বাইরে গুঞ্জন আরও অনেক বেশি শোরগোল তুলেছিল। সম্পর্কের সেই কানাঘুষো কোনও দিন প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি কেউই। রেখা ও অমিতাভ দু’জনেই তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে বরাবর নীরব থেকেছেন। কিন্তু কয়েক দশক আগে রেখার বাবা, কিংবদন্তি অভিনেতা জেমিনি গণেশন এ প্রসঙ্গে খোলাখুলি জানিয়েছিলেন নিজের মতামত।

 

একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে (স্টার অ্যান্ড স্টাইল), জেমিনি গণেশন সরাসরি বলেছিলেন—“অনেকে আমাকে বলে, রেখা তার ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট করছে অমিতাভের সঙ্গে জড়িয়ে। কিন্তু আমি কখনও রেখার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাই না। কেনই বা তা করব?”

 

এর পরেই নিজের বিতর্কিত ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি যোগ করেন—“আমি যখন সাবিত্রী আর পুষ্পাবল্লীর সঙ্গে বিয়ে করলাম, তখনও অনেক ভ্রূকুটি হয়েছিল। ওটা ছিল ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। অথচ  দিলীপ কুমার যখন আসমাকে বিয়ে করলেন বা ধর্মেন্দ্র হেমাকে বিয়ে করলেন—তাতে আর কেউ এতটা চমকে উঠল না। এক অর্থে আমিই তো বলিউডে বিবাহ বহিৰ্ভূত সম্পর্কের ট্রেন্ডসেটার।”

 

১৯৫৪ সালে জন্ম রেখার। মা পুষ্পাবল্লী, বাবা জেমিনি গণেশন। কিন্তু তাঁদের বিয়ে হয়নি কোনও দিনই। পুষ্পাবল্লী তখন স্বামী থেকে আলাদা থাকতেন, আর জেমিনি তখনও প্রথম স্ত্রীর সংসারে। জন্ম থেকেই জটিলতা যেন জুড়ে গিয়েছিল রেখার জীবনের সঙ্গে। এর পর বলিউডে রূপালি সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনেও বারবার তিনি এসেছেন শিরোনামে। কখনও নায়কদের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন, কখনও পরিচালককে ঘিরে খবর। ১৯৯০ সালে ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালকে বিয়ে করেছিলেন রেখা। কিন্তু সেই দাম্পত্য স্থায়ী হয়নি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে মুকেশ আত্মঘাতী হন। শোক ও ট্র্যাজেডির ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় রূপকথার মতো জীবনকথা।

 

অন্যদিকে, অমিতাভ বচ্চন ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী জয়া বচ্চনকে। আজ তাঁদের সংসারে দুই সন্তান—অভিষেক ও শ্বেতা। পরিবার নিয়ে অমিতাভ স্থিতিশীল থেকেছেন, অথচ রূপালি গুঞ্জনের আলোছায়া কখনও পিছু ছাড়েনি।

 

বলিউডের অন্দরমহলের এই গল্প আজও চর্চিত। রূপালি রসায়ন আর বাস্তব জীবনের দ্বন্দ্ব যেন অমিতাভ–রেখা অধ্যায়কে করে তুলেছে আরও রহস্যময়, বলিউডের এক অমর কাহিনি।

 

অমিতাভ বচ্চন আর রেখা—বলিউডের ইতিহাসে এই জুটি যেন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য জাদুর নাম। দু’জনকে একসঙ্গে পর্দায় দেখলেই দর্শক বুঝে গিয়েছিলেন, রোম্যান্স, আবেগ আর উত্তেজনার অন্য মাত্রা অপেক্ষা করছে।

 

‘দো আনজানে’ (১৯৭৬) – এই ছবিতেই শুরু হয় অমিতাভ–রেখার অনস্ক্রিন রসায়নের ঝড়।
‘মিঃ নটবরলাল’ (১৯৭৯) – মজাদার কাহিনি, তাতে রোম্যান্টিক ছোঁয়া—অমিতাভ-রেখার জুটি নজর কাড়ে সহজেই।
‘সুহাগ’ (১৯৭৯) – অ্যাকশন–ড্রামা ঘরানার এই ছবিতে তাঁদের উপস্থিতি ছিল বক্স অফিসের টনিক।
‘মুক্কাদার কা সিকান্দর’ (১৯৭৮) – আবেগঘন গল্পে রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডির সেরা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল তাঁদের মিলন–বিচ্ছেদ।
 ‘সিলসিলা’ (১৯৮১) – অমিতাভ–জয়া–রেখা—বাস্তব আর রূপালি গুঞ্জন মিলেমিশে তৈরি করে বলিউডের অন্যতম বিতর্কিত ত্রিকোণ প্রেমকাহিনি। দর্শকদের কাছে এই ছবিই আজও অমিতাভ–রেখা জুটির সবচেয়ে বিখ্যাত অধ্যায়।

 

পর্দায় তাঁদের রসায়ন এতটাই জীবন্ত ছিল যে, গুঞ্জন বারবার ছড়িয়ে পড়েছিল পর্দার বাইরেও। আর সেই কারণেই আজও অমিতাভ–রেখা জুটি শুধু সিনেমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বলিউডের চিরন্তন রহস্য হয়ে রয়ে গিয়েছে।