বলিউডের 'হি-ম্যান' ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে চর্চা কমছেই না। কিংবদন্তি অভিনেতার জীবনের আরও একটি দিক রয়েছে যা সম্প্রতি শিরোনামে এসেছে—তা হল তাঁর পৈতৃক সম্পত্তির হস্তান্তর। অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে, এই অভিনেতা তাঁর কোটি কোটি টাকার পৈতৃক জমি ও বাড়ি ছেলে সানি দেওল, ববি দেওল কিংবা মেয়ে অজেতা, বিজয়েতা, এশা ও অহনা দেওল কাউকেই দেননি। বরং এই সম্পত্তি তিনি তাঁর ভাইপোদের নামে লিখে দিয়েছেন।
মুম্বাইয়ের ঝলমলে জগৎ থেকে বহু দূরে, পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার ডাঙ্গো গ্রামে রয়েছে ধর্মেন্দ্রর শিকড়। তিনি নসরলিতে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবের বেশ কিছু বছর কাটিয়েছেন এই ডাঙ্গো গ্রামের পৈতৃক ভিটেতে। একসময়কার সাদামাটা, মাটি ও ইটের তৈরি সেই বাড়িটি এখন কোটি টাকার সম্পত্তি। মুম্বই সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২.৫ একর জমি সমেত এই সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
অভিনয়ের জন্য মুম্বই চলে এলেও, ডাঙ্গোর মাটির সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর আত্মিক টান কখনও কমেনি। বছরের পর বছর ধরে তাঁর কাকার বংশধররা পরম যত্নে সেই বাড়িটি রক্ষা করে এসেছেন। ধর্মেন্দ্র বহুবার গ্রামে ফিরে এসেছেন, আর প্রতিটি সফরই ছিল আবেগে পূর্ণ। গ্রামবাসীরা স্মরণ করেন, ২০১৩ সালে এক ছবির শুটিংয়ের সময় তিনি যখন গ্রামে আসেন, তখন গাড়ি থেকে নেমে পৈতৃক ভিটের মাটি স্পর্শ করে কপালে ঠেকিয়েছিলেন।
পরে তিনি যখন সিদ্ধান্ত নেন যে এই সম্পত্তি চিরতরে তাঁর পরিবারের সেই অংশটির হাতে তুলে দেবেন, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এটিকে আগলে রেখেছে, তখন তাঁর এই উদারতা সবাইকে মুগ্ধ করে। তিনি তাঁর কাকার নাতিদের অর্থাৎ অভিনেতার ভাইপোদের কাছে পৈতৃক এস্টেটটি এবং জমি হস্তান্তর করার আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—তিনি তাঁর বাবার দেওয়া দায়িত্বকে সম্মান জানিয়েছিলেন এবং নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে তাঁর ভাইপোরা তাঁদের পরিবার নিয়ে যেন সেখানে নিরাপদে বসবাস করতে পারেন।
গ্রামবাসীদের কাছে ধর্মেন্দ্রর এই কাজটিকে কেবল একটি উপহার নয়, এটি শিকড়ের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসার প্রতীক। তাঁর এক আত্মীয়, বুটা সিং, (যিনি লুধিয়ানার একটি কাপড়ের মিলে কাজ করেন), আজও ধর্মেন্দ্রর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করেন। একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের কথায়, "তিনি (ধর্মেন্দ্র) কখনও এই সম্পত্তির মূল্য নিয়ে ভাবেননি। তাঁর কাছে এটা স্রেফ বাড়ি ছিল।" সম্পত্তি ও অর্থের হিসাবের ঊর্ধ্বে উঠে জন্মস্থানের প্রতি তাঁর এই নিঃস্বার্থ টান বলিউডের এই কিংবদন্তিকে আরও মহৎ করে তুলেছে।
