এখন প্রাইম ভিডিয়োতে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিজন ৩'-এ অনবদ্য অভিনয়ের জন্য চারদিকে প্রশংসায় ভাসছেন মনোজ বাজপেয়ী। চার বছর পর ফেরা এই সিরিজ শুধু রেকর্ড ভাঙেনি, বরং আবারও প্রমাণ করেছে মনোজ কেন বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেতা। তবে এই সাফল্যের মাঝেই এক আড্ডায় উঠে এল বলিউডের এক অস্বস্তিকর সত্য, যা খুব কমই প্রকাশ্যে আসে।
কুশা কপিলা ও কমেডিয়ান রবি গুপ্তর সঙ্গে এক মজার কথোপকথনে মনোজ অকপটে কথা বলেন বলিউডে অভিনেতাদের মধ্যে থাকা গভীর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে। সেই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা জয়দীপ আহলাওয়াতও যিনি নিজেও ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর এই সিজনে মনোজের মুখোমুখি হয়েছেন, ভয়ংকর ভিলেন ‘রুকমা’ সেজে।
কথার ফাঁকেই জয়দীপ ফিরে যান ‘পাতাললোক’ সিজন ১ মুক্তির স্মৃতিতে। আবেগ চেপে রাখতে না পেরে তিনি জানান, সিরিজ মুক্তির রাতেই মনোজ বাজপেয়ীর ফোন পেয়েছিলেন। প্রায় ১৫-২০ মিনিট কথা হয়েছিল দু’জনের। “ওই ফোন কলটা আমি সারাজীবন ভুলব না। ফোন রাখার পর প্রচণ্ড কেঁদেছিলাম,” বলেন জয়দীপ।
মনোজ তখন ঠিক কী বলেছিলেন? হাসতে হাসতেই অভিনেতা বলেন, “আমি ওকে বলেছিলাম, একটা ইনস্টিটিউশন খোল, আমি তোর স্টুডেন্ট হয়ে যাব।” এই এক বাক্যেই স্পষ্ট, অভিনয়ের প্রতি কতটা শ্রদ্ধা আর সততা মনোজের।
তবে ব্যক্তিগত প্রশংসা বা সৌহার্দ্যের জায়গা থেকে কথোপকথন শিগগিরই ঢুকে যায় বৃহত্তর এক বাস্তবতায়। মনোজ স্পষ্ট ভাষায় জানান, বলিউডে বেশিরভাগ অভিনেতা একে অন্যের খোলাখুলি প্রশংসা করেন না। “আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতারা একে অন্যের কাজের প্রশংসা করতে ভয় পান। ফোন করে ভাল কাজের কথা বলবেন, এটা প্রায় হয়ই না। কারণ সবাই ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।” এখানেই থামেননি তিনি। নিজের দীর্ঘ লড়াইয়ের কথাও তুলে ধরে বলেন, “আজও আমাকে কাজের জন্য মানুষকে ফোন করতে হয়। কারণ আমি জন্ম থেকেই স্ট্রাগলার ।”
মনোজ ও জয়দীপের সম্পর্ক অবশ্য নতুন নয়। এর আগে দু’জন একসঙ্গে কাজ করেছেন ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ এবং ঐতিহাসিক যুদ্ধনাট্য ‘চট্টগ্রাম’-এ। তবে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান ৩’-এ তাঁদের সংঘর্ষ একেবারে অন্য মাত্রার, এখানে ‘শ্রীকান্ত তিওয়ারি’ বনাম ‘রুকমা’।
রাজ ও ডিকে জুটির পরিচালিত ‘ফ্যামিলি ম্যান ৩’-এ ‘শ্রীকান্ত’ একটি বড় বিপর্যয়ের পর নিজেই হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের চোখে ‘ওয়ান্টেড’। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী ‘জেকে’-কে নিয়ে সে নিজের সংস্থার চোখ এড়িয়ে পালাতে বাধ্য হয়। সেই পালানোর মাঝেই তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সামলানো ভয়ংকর চোরাকারবারি ও ঘাতক ‘রুকমা’কে থামানো, যার পিছনে রয়েছে রহস্যময় হ্যান্ডলার ‘মীরা’।
চার বছর পর মুক্তি পাওয়া এই সিজন প্রথম সপ্তাহেই ২০২৫ সালের সবচেয়ে বেশি দেখা ওয়েব সিরিজ হয়ে রেকর্ড গড়ে। আর শেষ মুহূর্তের সাসপেন্স দিয়ে শেষ হওয়া এই সিরিজ তো নিশ্চিত করেছে, সিজন ৪-এর অপেক্ষা আরও তীব্র হবে। সাফল্যের গল্পের আড়ালে তাই রয়ে গেল এক নিঃসন্দেহে তিতকুটে বাস্তবতা, যেখানে প্রশংসা দুর্লভ, অথচ একটিমাত্র ফোন কলই বদলে দিতে পারে একজন অভিনেতার জীবন।
