অসমের সঙ্গীতজগতের প্রাণ, জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা-প্রযোজক জুবিন গর্গ (৫২) আর নেই। সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হল।উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে খ্যাত জুবিন কয়েকদিন আগেই সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে। কিন্তু উৎসব শুরুর আগেই ঘটে গেল অঘটন। জানা গিয়েছে, হঠাৎই সমুদ্রে পড়ে যান শিল্পী। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, চিকিৎসকেরা শেষপর্যন্ত তাঁকে বাঁচাতে পারেননি। শুধু অসম নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গীত, সংস্কৃতি আর চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা, হিন্দি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অসংখ্য অমর সঙ্গীত উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর অকাল প্রয়াণে ভক্তমহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

শোনা যাচ্ছে, ডাক্তারদের মতে, বুধবার আইসিইউতে স্থানান্তরের পর জুবিন খিঁচুনির আক্রমণে আক্রান্ত হন এবং মৃগীরোগজনিত ফিটের কারণে অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে। মাথায় আঘাতজনিত ক্ষতের জন্য তাঁর মাথায় একাধিক সেলাইও পড়েছিল।

সঙ্গীতপ্রেমী, সহকর্মী শিল্পী থেকে শুরু করে অগণিত অনুরাগী— জুবিন গর্গের এই হঠাৎ-মৃত্যু স্তম্ভিত করে দিয়েছে সবাইকে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আসামি এবং ভারতীয় সঙ্গীতের মঞ্চে তিনি ছিলেন এক অনন্য কণ্ঠস্বর। জুবিনকে বলা হত ‘উত্তর-পূর্বের রকস্টার’! 

অহমিয়া সঙ্গীত ও চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, ২০০৬-এ বলিউড ছবির ‘গ্যাংস্টার’-এর সেই জনপ্রিয় গান ‘ইয়া আলি’ তাঁকে সারা দেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে শুরু— গায়ক, সুরকার, অভিনেতা— বহুমুখী প্রতিভার আসল সংজ্ঞা হয়ে ওঠেন জুবিন।

অসমে তাঁর অবদান এককথায় অতুলনীয়। হৃদয়ছোঁয়া আধুনিক গান, ফিউশন ট্র্যাক, কিংবা প্রাণভরানো বিহু— সবেতেই তাঁর সুরে মিশেছে আবেগ। ৪০ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করা হয়েছে তাঁর কণ্ঠে—অহমিয়া, হিন্দি, বাংলা থেকে ইংরেজি— সংখ্যায় এবং বৈচিত্র্যে তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী।

সিনেমায় অভিনয় করেছেন— অহমিয়া ও বাংলা দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই। সিনেমার জন্য সুরও বেঁধেছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিনি নিজেই নামেন অসম সিনেমা বাঁচাতে— মিশন চায়না থেকে শিকার, একের পর এক সিনেমা বানাতে শুরু করেন। ৩১ অক্টোবর মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর নতুন ছবি ‘রই রই বিনালে’।

উত্তর-পূর্ব ভারতের কোটি কোটি মানুষের কাছে জুবিন শুধু একজন শিল্পী নন— তিনি আবেগ, তিনি অহংকার, তিনি এক অনন্ত পরিচয়ের প্রতীক।