আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিট (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যে কতটা কঠিন ও মানসিকভাবে ক্লান্তিকর, তা পরীক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবারই সবচেয়ে ভালো জানেন। দিনের পর দিন পড়াশোনা, রাত জেগে রিভিশন, একের পর এক মক টেস্ট- এই দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রার শেষে সাফল্য এলে তা উদযাপন করার ইচ্ছেটাও স্বাভাবিকভাবেই প্রবল হয়। সাধারণত বাবা-মায়েরা ঘরোয়া আড্ডা বা ছোটখাটো পার্টির আয়োজন করেন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের ডেকে খাওয়াদাওয়ার মধ্য দিয়ে সন্তানের সাফল্যকে স্মরণীয় করে তোলেন।
কিন্তু সম্প্রতি এক বাবার উদযাপন সেই চেনা গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়ে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে সামাজিক মাধ্যমে। নিট পরীক্ষায় ছেলের সাফল্যে তিনি গোটা গ্রামের জন্য ‘আইটেম ডান্স’-এর আয়োজন করেন। ঘটনাটি নতুন নয়, তবে সেই উদ্ভট ও ব্যতিক্রমী উদযাপনের একটি পুরনো ভিডিও সম্প্রতি ফের ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আজকাল ডট ইন.
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি খোলা মাঠে শতাধিক গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন। মাঠের মাঝখানে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সেখানে এক মহিলা নৃত্যশিল্পী পারফর্ম করছেন। চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের অনেকেই মোবাইল ফোনে সেই নাচের দৃশ্য রেকর্ড করছেন। গ্রামের উৎসবমুখর পরিবেশ, হাই ভোল্টেজ সঙ্গীত এবং অস্বাভাবিক উদযাপন- সব মিলিয়ে দৃশ্যটি দ্রুতই নেটদুনিয়ার নজর কাড়ে।
ভিডিওটি সামনে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। কেউ মজা করে লেখেন, “এত কষ্ট করে নিট ক্লিয়ার করেছে, একটু তো হবেই- বাবা তো একেবারে লেজেন্ড!” আবার কেউ ঠাট্টার সুরে মন্তব্য করেন, “এভাবে নাচের আয়োজন করে উনি নিশ্চিত করলেন, আশেপাশের কেউ আর নিটের পড়ায় মন দিতে পারবে না।” আরেকজনের কটাক্ষ, “ইন্ডিয়া ইজ নট ফর বিগিনার্স।”
অনেকে বাবার রসবোধ নিয়েও মন্তব্য করেছেন। একজন লেখেন, “বাবা নিশ্চয়ই নিজে ব্যাকবেঞ্চার ছিলেন।” কেউ আবার বলেন, “এই উদযাপনে পুরো গ্রামই মোটিভেটেড।” এমনকি এক ব্যক্তি বাবাকে ‘ফাদার অফ দ্য সেঞ্চুরি’ বলেও আখ্যা দেন।
এই ঘটনাটি আবার মনে করিয়ে দিয়েছে, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে উদযাপন বা প্রতিক্রিয়া যে একেবারেই একরকম হয় না। চলতি বছরের মে মাসেই কর্নাটকে এক ভিন্নধর্মী ঘটনার সাক্ষী ছিল সামাজিক মাধ্যম। সেখানে এক পরিবার তাদের ছেলের ক্লাস টেন রাজ্য বোর্ড পরীক্ষায় ফেল করার পরেও হতাশা না দেখিয়ে বরং পার্টির আয়োজন করে। মাত্র ৩২ শতাংশ নম্বর পেলেও ছেলেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে না দিয়ে বাবা-মা কেক কাটার মাধ্যমে তাকে উৎসাহ দেন। কেকের ওপর ছেলের প্রাপ্ত নম্বরও লেখা ছিল।
ওই ঘটনার প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছেলের বাবা বলেছিলেন, “কেকের ওপর এই নম্বরটাই ডিজাইন করা হয়েছিল। অভিষেক যখন কেক কাটে, তখন আমরা পরিবারের সবাই তাকে খাইয়ে দিই এবং পরের বার আরও ভালো করার জন্য উৎসাহ দিই।”
নিট উত্তীর্ণ হওয়ার উদযাপন হোক বা পরীক্ষায় ব্যর্থতার পর সন্তানকে সাহস জোগানোর প্রয়াস- এই দুই ঘটনাই দেখিয়ে দিল, ভারতের সমাজে শিক্ষা, সাফল্য ও ব্যর্থতাকে ঘিরে উদযাপন ও প্রতিক্রিয়ার ধরন কতটা বৈচিত্র্যময় এবং কখনও কখনও কতটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে।
