তারকা-অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, সমাজকর্মীর পাশাপাশি একজন চিন্তকের তকমাও জোড়া হয় আমির খানের নামের পাশে। বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ শুধু সিনেমায় নয়, ভারতীয় সমাজ-চিন্তায়ও এক বড় পরিবর্তনের মুখ তৈরি করেছিলেন তিনি। আমির খানের সঞ্চালনায় ২০১২ থেকে ২০১৪ মাত্র তিন বছর চলেছিল ছোটপর্দার এক ঐতিহাসিক অধ্যায় ‘সত্যমেব জয়তে’। নারীভ্রূণ হত্যা, শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন, বর্ণবৈষম্য, কন্যাদায়, ধর্ষণ, সমকামীদের অধিকার -ভারতের সবচেয়ে অস্বস্তিকর, কঠিন এবং লুকোনো সত্যকে যে সাহসী দৃষ্টিতে সামনে এনেছিল আমিরের এই শো, তার অভিঘাত সারা দেশ জুড়েই তখন অনুভূত হয়েছিল। সাড়া পড়ে গিয়েছিল চারপাশে। ঘরে ঘরে শুরু হয়েছিল আলোচনা। কিন্তু সেই আলোচনার বিপরীতে ছিল এক ভয়াবহ দিকও।

 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই অন্ধকার অধ্যায়ের পর্দা তুললেন আমিরের ভাগ্নে তথা অভিনেতা ইমরান খান। এক জনপ্রিয় ইউটিউবারের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়ে ইমরান সাফ জানালেন, শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ার নিন্দা নয়, ‘সত্যমেব জয়তে’র পর শুরু হয়েছিল এমন সব হুমকি, যা ভয়ঙ্কর, উদ্বেগজনক এবং শিউরে ওঠার মতো।

 

 

 

“আমির খানকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। জানি, তিনি যা করেন, সম্পূর্ণ সততার জায়গা থেকে করেন” বললেন ইমরান। আর সেই সততাই নাকি দেশের মানুষের একাংশের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল। বিশেষ করে ভারতে নারীভ্রূণ হত্যার মতো বিষয়ে নির্মম সত্য তুলে ধরার পর শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। শুধু রাগ নয়, খুল্লমখুল্লা ‘ডেথ থ্রেট’ পান আমির খান।

 

ইমরানের কথায়, এটা কোনোও এক দিনের ঘটনা ছিল না, বরং একটা সংগঠিত চেষ্টার মতো ছিল। বহুদিন ধরেই নাকি চেষ্টা চলেছে আমিরকে ভয় দেখানোর, চুপ করানোর, এমনকি দেশ ছাড়ানোরও। “মামাকে যেভাবেই হোক এই দেশ থেকে তাড়াতে হবে -বহু বছর ধরেই এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনেকে”, রসিকতার ছলে উচ্চারণ করলেও ইমরানের কথার ভিতরে ছিল তীব্র বাস্তবের কাঁটা। এরপর আরও বড় কথা বলেন ইমরান,  “এ সব হুমকির পেছনে একটা উদ্দেশ্য থাকে। সেটা হল ভয় দেখাও, মুখ বন্ধ করে দাও। যেন বার্তা যায়‘বেশি কথা বলিস না। না হলে দরজায় দাঁড়িয়ে যাবে লোক, আর বাড়ি পুড়িয়ে দেবে।’”

 

এই অভিজ্ঞতা, ইমরানের মতে, শুধু একজন তারকার নয়, পুরো সমাজের জন্যই শিক্ষা। মতপ্রকাশ, বিরোধিতা আর সত্য উচ্চারণের জায়গা যতটা গণতন্ত্রে থাকা উচিত, তা ভয় আর নিপীড়নের সামনে কত সহজে দমিয়ে দেওয়া যায়, তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ আমিরের জীবনের এই অধ্যায়।

 

 

 

 

 

 

 

 

এই সময়ে যদিও অভিনয় থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন ইমরান খান, তবে তিনি ফিরছেন নতুন ছবি ‘হ্যাপি প্যাটেল খতরনাক জাসুস’–এর মাধ্যমে। কিন্তু তার আগেই তাঁর এই মন্তব্য ফের ঝড় তুলেছে, আমির খানের ‘সত্যি বলার সাহস’-এর পিছনে ঠিক কতটা অন্ধকার চাপা পড়ে ছিল?

প্রশ্নটা ফের সামনে এনে তুলে ধরলেন ইমরান।