বলিউডের চিরসবুজ, রহস্যময়ী নায়িকা রেখা আজ ৭১-এ পা দিলেন। তাঁর জীবনকথা যেন সিনেমার থেকেও রোমাঞ্চকর-এক অবৈধ সম্পর্কের সন্তান হিসেবে জন্ম, অল্প বয়সে স্কুলছাড়া, আর তারপর বাধ্য হয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ। কিন্তু যত বাধাই আসুক, রেখা নিজের ছাপ তৈরি করেছিলেন, নিজের যোগ্যতায়।
রেখার বাবা জেমিনি গণেশন ছিলেন দক্ষিণের তারকা, কিন্তু মেয়েকে স্বীকারই করেননি। ফলে নবম শ্রেণিতেই স্কুল ছাড়তে হয় রেখাকে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মা ও ভাইবোনদের মুখে অন্ন জোগাতে শুরু হয় তাঁর অভিনয়জীবন। প্রথমে দক্ষিণী ছবিতে তেমন কাজ না পেয়ে পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। কিন্তু তখনও চেনা হয়নি হিন্দি ভাষা। শুটিং সেটে অনেকে উপহাস করতেন তাঁকে। পরে এক ফিল্মি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “হিন্দি জানতাম না। কেউ ভাল বলছে না খারাপ বলছে, কিছুই বুঝতাম না। শুধু বাড়ি গিয়ে পুতুল নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করত।”
১৯৭০ সালে 'সাওন ভাদোঁ' ছিল রেখার প্রথম হিন্দি ছবি। তারপর একের পর এক ছবি—এক বছরে কখনও দশটা পর্যন্ত মুক্তি পেত তাঁর! কখনও গাড়িতে মেকআপ বদলাতেন, কখনও গাড়িতেই একটু ঘুমাতেন। নিজেই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “একসময় আমার প্রায় ৪০টা ছবি একসঙ্গে শুট হচ্ছিল!”
যদিও অনিচ্ছুক অভিনেত্রী হিসেবে শুরু হয়েছিল তাঁর অভিনয় যাত্রা, কিন্তু অল্প সময়েই রূপান্তর ঘটে রেখার। ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দর’, ‘সিলসিলা’, ‘ঘর’, ‘মি. নটওয়ারলাল’—প্রতিটি চরিত্রে তিনি ছাপ ফেলেন জনমানসে। আর এর পেছনে ছিলেন একটাই নাম—অমিতাভ বচ্চন। এক সাক্ষাৎকারে রেখা বলেছিলেন, “আমি যা কিছু শিখেছি, সবটাই ওঁর কাছ থেকে। ওঁকে দেখে, ওঁকে পর্যবেক্ষণ করে আমি নিজেকে তৈরি করেছি।”
এক সাক্ষাৎকারে রেখা স্মরণ করেন ‘সিলসিলা’ ছবির একটি দৃশ্যের কথা, যেখানে হাজারো দর্শকের সামনে তাঁকে কান্নারত অবস্থায় সংলাপ বলতে হয়েছিল। ভয় পেয়ে তিনি সময় চাইলে পরিচালক যশ চোপড়া রাজি হননি। তখন অমিতাভ তাঁকে গল্প শোনান—কীভাবে ‘জায়ান্ট’ ছবির সময় জেমস ডিন দর্শকদের সামনে প্রস্রাব করে ভয় কাটিয়েছিলেন! এরপর ডিন নিজেকে বলেছিল, ‘এর থেকে খারাপ আর কী হতে পারে?’ ব্যস! তারপরেই দারুণ পারফর্ম করেছিলেন তিনি পরের শটে। রেখা বলেন, “ওর মুখে গল্পটা শুনেই আমি সাহস পাই। দৃশ্যের শুট শুরু হতেই সবাই চুপ হয়ে যায়। শেষে আমি যখন অমিতজিকে জড়িয়ে ধরি, তখন সবাই ‘ওওওহ্’ বলে ওঠে!” রেখা মেনে নিয়েছিলেন, “আমরা দু’জনই তখন এমন একটা পর্যায়ে ছিলাম, যেখানে একে অপরের ওপর প্রভাব পড়া স্বাভাবিক ছিল। দশটা ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি—প্রভাব পড়বে না?”
অন্যদিকে, জিতেন্দ্রর সঙ্গেও রয়েছে তাঁর অদ্ভুত বন্ধুত্ব। ৩০টিরও বেশি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন রেখা ও জিতেন্দ্র। রটনা উড়েছে প্রেমের, কিন্তু তাঁদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট। ২০২৪ সালে জিতেন্দ্র বলেন, “রেখা আসল বন্ধু। একবার আয়কর সমস্যা মেটাতে ও নিজের হাতে চা-জলখাবার পরিবেশন করেছিল অফিসারকে! কে এমন করে আজকাল?”
এককালে যার ঠোঁটে উচ্চারণও করতেন না অনেক প্রযোজক, সেই রেখা আজ ভারতীয় সিনেমার অনন্য প্রতীক। তাঁর জীবনে আছে প্রেম, বেদনা, লড়াই আর অমিতাভের পাশে শেখা এক অমূল্য শিক্ষা: “শব্দ নয়, অনুভবই আসল অভিনয়।”
