বিনোদন জগৎ যতটা জাঁকজমকে ভরা, ঠিক ততটাই তাতে জড়িয়ে থাকে অনিশ্চয়তা। থাকে অস্থিরতা এবং দীর্ঘক্ষণ কাজের জন্য চরম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। এই দীর্ঘ সময় ধরে কাজের চাপের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে ইন্ডাস্ট্রির বহু সদস্যই মানসিক অবসাদের কবলে পড়েন। প্রবীণের পাশাপাশি নবীন শিল্পীরাও রয়েছেন এই তালিকায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডাস্ট্রির দুই চিত্রগ্রাহক অবসাদের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাই এই অনভিপ্রেত ঘটনা রুখতে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের উদ্যোগে নয়া পদক্ষেপ নিল ফেডারেশন। টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনও শিল্পী যদি কখনও মানসিক অবসাদের শিকার হন, তাহলে তাঁরা যাতে সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ডাক্তারি পরিষেবা পায় নিখরচায়, তার ব্যবস্থা করল ফেডারেশন।
কলকাতার নামি সরকারি হাসপাতাল এস এস কে এম (পি.জি) ফেডারেশনের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে। আরও ভাল করে বললে, পিজি হাসপাতালের ডিরেক্টর ও ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি কর্তৃপক্ষ। আগামী সাত দিনের মধ্যেই পিজি হাসপাতালের পক্ষ থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ফেডারেশনের অফিসে মাসে তিন দিন করে বসবেন .এবং যেসব শিল্পী-কলাকুশলীরা অবসাদ অথবা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের পরামর্শ তো দেবেনই এবং প্রয়োজনে এই কলাকুশলী ও শিল্পীরা পিজি হাসপাতালের সাইকায়াট্রি বিভাগে চিকিৎসা করাতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করবেন।
এই উদ্যোগটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতেই টেকশিনিয়ানস স্টুডিওতে ফেডারেশনের ডাকে হাজির হয়েছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-এর মত টলিপাড়ার প্রথম সারির একাধিক পরিচালক, প্রযোজক। ছিলেন ইম্পা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্তও। এবং অবশ্যই পিজি হাসপাতালের সাইকায়াট্রি বিভাগের চিকিৎসকরাও। বৈঠক শেষে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, " এরকম উদ্যোগ কখনও হয়নি, কেউ ভাবিনি। তাই এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ফেডারেশনকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই অনিশ্চয়তার সময় একে অপরকে বন্ধু ভাবতে হবে। বন্ধু যত বাড়বে, নিঃসঙ্গতা তত কমবে। আর একটা কথা, আমাদের শিল্পীদের কাজ দেখে বহু মানুষ আনন্দ পায় তাই আমাদেরও ভাল থাকাটা জরুরি। তাই না?"
পরিচালক-অভিনেতা শিবপ্রসাদের মুখেও শোনা গেল প্রায় একই কথা। এই উদ্যোগের জন্য ফেডারেশন সভাপতি ও পিজি হাসপাতালে কর্মরত মনোবিদদের ধন্যবাদ জানালেন তিনি। এবং জানালেন এরকম অনিশ্চয়তার সময়ে টলিপাড়ার সদস্যদের একে অপরের পাশে থাকা খুব জরুরি। জোর গলায় তাঁকে বলতে শোনা গেল, “ গত ৩০ বছরে এমন সিদ্ধান্ত বা পরিবর্তন টলিউডে হয়নি!”
