উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে পথিকৃৎ বসুর নতুন ছবি ‘দাবাড়ু’। সেখানেই গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে সৌরশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের বাবা শঙ্কর চক্রবর্তী। বহুদিন পর এমন একটি পছন্দের চরিত্র পাওয়া এবং বর্তমানে টলিউডের অবস্থা নিয়ে অকপট অভিনেতা

প্রশ্ন: মঞ্চ, ছোটপর্দা, বড়পর্দা মিলিয়ে কাজ নিয়ে এখন ব্যস্ততা কতটা?
শঙ্কর: থিয়েটার নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আর ‘তোমাদের রানী’ নামে একটি সিরিয়াল করছি। থিয়েটারের জন্য এদিকে বেশি সময় দিতে পারছি না। সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজ করলাম ‘কেমিস্ট্রি মাসি’। আর উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার ‘দাবাড়ু’তে। প্রযোজক নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং অবশ্যই পরিচালক পথিকৃৎ বসুর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, ‘দাবাড়ু’তে এত ভাল চরিত্র দেওয়ার জন্য। 

প্রশ্ন: ‘দাবাড়ু’তে নায়কের বাবা আপনি। আপাতদৃষ্টিতে তাকে খুব খারাপ মনে হলেও আসলে কেমন?
শঙ্কর: আপাতদৃষ্টিতে খুব খারাপ মানুষ, রাগী মনে হয়। নেশা করে। বাড়িতে ঝামেলা করে। প্রথম দিকে ছেলের বিপক্ষে থাকলেও পরে এই বাবাই পাশে দাঁড়ায়। চরিত্রটার একটা দারুণ উত্তরণ হয়। ছেলে লেখাপড়া শিখে ভাল চাকরি করুক, একজন বাবা হিসেবে সেটা চাওয়া তো ভুল নয়।

প্রশ্ন: সন্তানের ওপর মা-বাবার এই যে নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বা কখনও নিজেদের সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া, সেটা আপনি কীভাবে দেখেন?
শঙ্কর: আমার মনে হয় ওই ভাবে ধরেবেঁধে কিছু হয় ন। আমিও আমার মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিজে খুব বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি। তবে মেয়েকে বলেছিলাম, দেখ, আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি। তোকে দারুণ রেজাল্ট করতে হবে না, পাশ করিস। ও নিজের মতো পড়াশোনা করেছে। গ্র্যাজুয়েশন করে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পছন্দমতো কোর্স নিয়ে পড়েছে। পুরোটাই নিজের চেষ্টায় নিজের ইচ্ছেতে। তবে এদিকে ওর মা-ই ওকে দেখেছেন। মেয়ে খুব ভাল গাইত, নাচত, দুটোই ছেড়ে দেয়। শুধু তখন বলেছিলাম, নাচটা শিখতে পারতিস। ও শোনেনি। নিজের পথ বেছে নিয়ে ভালই আছে।  

প্রশ্ন: থিয়েটারে কাজ করলেও ছোট বা বড় পর্দার বদল চোখে পড়ে? কী মনে হয়? 
শঙ্কর: এখন অনেক কনটেন্ট নির্ভর ছবি হচ্ছে। ছোটপর্দার কাজ যে দারুণ এগিয়ে গিয়েছে তা নয়। ঝকঝকে হয়েছে। আগে অনেক সাহিত্য নির্ভর কাজ হত, এখন হয় না। তার কারণও আছে। সাহিত্যনির্ভর গল্প বাছলে প্রয়োজনে রাজস্থান বা শহরের বাইরে যেতে হয়। এদিকে বাজেট বা সময় দুটোরই অভাব। তাছাড়া, এখানে মূলত ড্রয়িংরুম ড্রামাই হয়। 

প্রশ্ন: কখনও কাজে একঘেয়েমি এসেছে? 
শঙ্কর: ভীষণ! আমি দশটা-পাঁচটার কেরানিগিরি করব না বলেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন যেখানে এসে পড়েছি সেটা কেরানির চাকরির চেয়েও খারাপ। কিন্তু আমায় করতেই হবে। কারণ আমার রুটি-রুজির ব্যাপার। না করলে খেতে পাব না। 

প্রশ্ন: তা হলে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে হয়?
শঙ্কর: করতে তো হয়ই। বলা ভাল বেশিরভাগ কাজই তাই করতে হয়। 

প্রশ্ন: শুধু মঞ্চই মুক্ত বাতাস? 
শঙ্কর: ঠিক তাই। ওখানে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারি। 

প্রশ্ন: ‘দাবাড়ু’তে দীপঙ্কর দে, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ বসু, খরাজ মুখোপাধ্যায়-সহ দুর্দান্ত শিল্পী কাজ করেছেন, অভিজ্ঞতা ভালো? 
শঙ্কর: হ্যাঁ। এখানে এত ভাল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন তাঁদের সঙ্গে কাজ করার একটা মজা আছে। বিশ্বনাথের সঙ্গে আমার একটা দৃশ্য আছে, যেখানে কথা প্রায় নেই বললেই চলে। সেই দৃশ্যে কি দারুণ এক্সপ্রেশন ওঁর! আমারও এক্সপ্রেশনটা ঠিকঠাক বেরিয়ে এল। ঋতুপর্ণার সঙ্গে সিন আছে। ঋতু এত ভাল কাজ করল। আমিও একটু উৎসাহ পেলাম। ভাল অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করার এটাই বাড়তি সুবিধে। আমি আগে যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি তাঁদের সঙ্গে কাজ করার পর অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি হত।

প্রশ্ন: মানে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, একসঙ্গে একটা ভালো কাজ করার ইচ্ছে? 
শঙ্কর: একদম। আমি ওর কাজ দেখে শিখছি ও আমার কাছ থেকে শিখছে। এই পারস্পরিক সহযোগিতার জায়গাটা ছিল বলেই ইন্ডাস্ট্রিটা আগে মধুর একটা জায়গা ছিল। আগে স্টুডিওতে গিয়েই খোঁজ করতাম বাকিরা কোথায় আছেন।তারপর একটা ঘরে জড়ো হয়ে যেতাম, সেখানেই একসঙ্গে দুপুরের খাওয়া হতো।এখন সেই জায়গাটা মিস করি। তবে এই ছবির মাধ্যমে আগের জায়গায় ফিরে যেতে পেরেছি, কারণ সেই মানুষগুলোকে পেয়েছি। সবাইকে বলব, এই ছবি শুধুই দাবা খেলা নিয়ে নয়। একটা পরিবারের গল্প। জীবনের গল্প। সর্বোপরি উত্তরণের গল্প।