বলিউডের বক্স অফিস ঘিরে বহুদিন ধরেই গুঞ্জন, এইসব আয়ের টাকার অঙ্কের সংখ্যা কি আদৌ সত্যি? সেই গুঞ্জনেই এবার সরাসরি আগুন ঢাললেন চলচ্চিত্র নির্মাতা-অভিনেত্রী দিব্যা খোসলা। দাবি করলেন, হিন্দি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশ বক্স অফিস কালেকশন আদতে ‘কর্পোরেট বুকিং’-এর মাধ্যমে ফুলিয়ে দেওয়া। বাস্তব দর্শকসংখ্যা প্রকাশিত পরিসংখ্যানের ধারেকাছেও পৌঁছয় না বলেই তাঁর মন্তব্য।

সম্প্রতি এই প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন দিব্যা এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। গোটা পরিস্থিতিকে তিনি আখ্যা দেন ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে এবং জানান, এটা আলাদা বিচ্ছিন্ন অভিযোগ নয় বরং ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে জমে থাকা এক ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক অনৈতিকতা।

২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর ছবি ‘জিগরা’ ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দিব্যার জবাব ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আমি এখানে কর্তৃত্ব দেখাতে আসিনি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে যা যা দেখেছি, যে সব অনৈতিক কাজ চলছে সেগুলো চোখের সামনেই ঘটছে। আমি যেটুকু অবস্থান তৈরি করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে যদি ভুলের বিরুদ্ধে কথা না বলি, তা হলে মেধার মূল্য কোথায় গেল? জায়গাটা কি মেধার হওয়া উচিত নয়?”

এরপর তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন,“ক্ষমতা আর টাকা থাকলে কর্পোরেট বুকিং করা যায়, অ্যাওয়ার্ড কেনা যায়। কিন্তু যাদের কাছে এই দুটোই নেই, তাদের কী হবে? মেধা তখন কোথায় দাঁড়ায়? এটা শুধু ‘জিগরা’র ক্ষেত্রেই নয় আজ বলিউডের প্রায় ৯০ শতাংশ ছবিতে কর্পোরেট বুকিং হচ্ছে। যে সংখ্যাগুলো ঘোষণা করা হয়, তা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। বাস্তব সংখ্যা তার ধারেকাছেও নয়। ইন্ডাস্ট্রির লোকজন এবং দর্শক সবাই এটা জানে। অথচ কেউ কিছু বলে না। এটা সত্যিই খুব দুঃখের।”

 

দিব্যা মনে করেন, এই সমস্যার সমাধানে ইন্ডাস্ট্রির সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। তবে সে সম্ভাবনা নিয়েও তিনি আশাবাদী নন। তাঁর মতে, বলিউড এতটাই ভঙ্গুর যে একজোট হয়ে কোনও বড় পরিবর্তন আনার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি হয়নি।

 

উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘জিগরা’ মুক্তির সময় বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয় যখন দিব্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ফাঁকা সিনেমা হলের ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন,“... ‘জিগরা’র শো দেখতে গিয়ে দেখলাম থিয়েটার একেবারেই ফাঁকা… সর্বত্র একই অবস্থা। অথচ কালেকশন ঘোষণা হচ্ছে আকাশছোঁয়া। দর্শককে কি আমরা বোকা বানাব?”

এই পোস্টে পরোক্ষভাবে অভিনেত্রী আলিয়া ভাট-কে নিশানা করা হয় বলেও মনে করেন অনেকে। আলিয়ার তরফে কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া না এলেও, প্রযোজক করন জোহর একটি রহস্যময় মন্তব্য করেন, “নীরবতাই কখনও কখনও সবচেয়ে শক্ত জবাব।” এর উত্তরে দিব্যা পাল্টা লেখেন, “সত্য সবসময়ই তাদের আঘাত করে, যারা সত্য মেনে নিতে চায় না।”

অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে ছবির যাত্রা শেষ হলে জানা যায়, ‘জিগরা’ ছবির মোট আয় প্রায় ৫৬.৯৩ কোটি টাকা, যেখানে ছবির বাজেট ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এই ফলাফলকে অনেকেই ২০১৪ সালের পর আলিয়া ভাটের সবচেয়ে দুর্বল বক্স অফিস পারফরম্যান্স বলে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে দিব্যার সাম্প্রতিক ছবি ‘এক চতুর নার’, যেখানে অভিনয় করেছেন নীল নিতিন মুখেশ, মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে এবং বর্তমানে নেটফ্লিক্সে সম্প্রচারিত হচ্ছে এই ছবি। বলিউডের ঝাঁ-চকচকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই অস্বস্তিকর বাস্তবতা নিয়ে দিব্যার বক্তব্য এখন তীব্র আলোচনার কেন্দ্রে। প্রশ্ন উঠছে, সংখ্যার এই খেলায় আদৌ কি জায়গা পাচ্ছে প্রকৃত মেধা?