ছবির মতোই ধর্মেন্দ্র ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল ঘটনার ঘনঘটা। ১৯৫৪ সালে স্ত্রী প্রকাশ কউরের সঙ্গে প্রথমে সংসার সাজিয়েছিলেন নায়ক। তাঁদের দুই পুত্র— সানি দেওল এবং ববি দেওল, বাবার মতোই বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। কিন্তু সেই সংসারেও চিড় ধরে এক সময়। পরবর্তীতে বলিউডের ‘ড্রিম গার্ল’, বয়সে ১২ বছরের হেমা মালিনীর প্রেমে পড়েন নায়ক। ধর্ম পরিবর্তন করে ১৯৮০ সালে তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই কন্যা— এষা দেওল এবং অহনা দেওল। হাজারও বিতর্ক পেরিয়ে দুই স্ত্রীর প্রতি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন অভিনেতা। সমালোচনা-কটাক্ষকে তুড়িতে উড়িয়েছেন।
তবে ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পরেও মোছেনি তাঁর দুই পরিবারের দূরত্ব। ২৭ নভেম্বর হেমা মালিনী এবং তাঁর দুই কন্যা এষা এবং অহনা তাঁদের বাসভবনে সুপারস্টার ধর্মেন্দ্রের স্মরণে প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বলিউডের তারকারা। এর আগে প্রথম প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল মুম্বইয়ের একটি হোটেলে। আয়োজন করেছিলেন ধর্মেন্দ্রের প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর এবং তাঁর দুই ছেলে সানি-ববি।
ধর্মেন্দ্রর প্রার্থনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বলিউডের বড় তারকারা—শাহরুখ খান, ঐশ্বর্য রায় বচ্চন, সলমন খান, অভিষেক বচ্চন, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, অভয় দেওল, আরিয়ান খান-সহ আরও অনেকে।
দুই পরিবার কখনও কাছাকাছি না এলেও, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় রয়েছে আজও। এষা এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি প্রকাশ কৌরকে প্রথম দেখেন ৩০ বছর বয়সে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ববি দেওল জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা-মা একসঙ্গে খন্ডালার ফার্মহাউসে থাকতেন। ববি বলেছিলেন, “মা-বাবা এখন খন্ডালায় আছেন। অনেকেই ভাবেন বাবা একা থাকেন, কিন্তু তা নয়। তাঁরা একসঙ্গে আছেন, শুধু বাবা একটু নাটকীয় স্বভাবের। ওঁরা দু’জনেই এখন বয়সে প্রবীণ, তাই ফার্মহাউসে থাকাটা তাঁদের কাছে স্বস্তির।” আর কয়েকদিন পরেই ৯০-এ পা দিতেন ধর্মেন্দ্র। ৮ ডিসেম্বর ছিল তাঁর জন্মদিন। কিন্তু তাঁর আগেই সারা জীবনের সঙ্গীকে একা করে চলে গেলেন অভিনেতা।
মায়ের প্রসঙ্গে ববি বলেন, “মা খুব শক্ত মনের মানুষ। ছোট গ্রাম থেকে উঠে এসে একজন সুপারস্টারের স্ত্রী হিসেবে জীবন মানিয়ে নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু উনি সবসময় বাবার পাশে থেকেছেন। আমরা যেমন মানুষ, তেমন হওয়ার পিছনে মায়ের ভূমিকা বিশাল।”
২৪ নভেম্বর প্রয়াত হন ধর্মেন্দ্র। বলিউড তথা সারা দেশে শোকের ছায়া। ছয় থেকে নয়ের দশক পর্যন্ত ধর্মেন্দ্রর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হত। এবং তিনি বলিউডে পরিচিত ছিলেন ‘হি-ম্যান’ নামে। আদ্যোপান্ত ‘মশালাদার’ বাণিজ্যিক ছবিকে তিনি এমন সহজাত দক্ষতায় সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন যে, মানুষ তাঁর অভিনয়ে খুঁজে পেত নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। শহর হোক বা গ্রাম, ধনী হোক বা সাধারণ মানুষ— ধর্মেন্দ্র ছিলেন সকলের আপনজন। সেই সময় রিকশার পিছনের পোস্টার থেকে শুরু করে অষ্টাদশীর বইয়ের পাতার ফাঁকেও জায়গা ছিল তাঁরই ছবির। যেন ধর্মেন্দ্র শুধু পর্দার নায়ক নন, সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক আবেগ, এক মুগ্ধতা।
